একটা সময় ছিল যখন বরপক্ষকে গরুর গাড়িতে চেপে যেতে দেখা যেত, আবার বিয়ে করে গরুর গাড়িতে চড়ে শ্বশুরবাড়িতে আসতে দেখা যেত নববধূকেও। কিন্তু সেদিন গেছে যে চলে! প্রত্যন্ত গ্রামেও এই ছবি এখন আর দেখা যায় না। শহরের কথা তো ছেড়েই দিলাম! গরুর গাড়িতে চড়ে বিয়ে করতে যাওয়ার দৃশ্য একটা সময় স্বাভাবিক দৃশ্য ছিল। সময়ের ব্যবধানে গ্রামবাংলার সেই ঐতিহ্য এখন ‘প্রায় বিপন্ন’ বলা যায়। তবে সেই পুরনো প্রথা ও ঐতিহ্য ফিরিয়ে এনেছেন পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার মঙ্গল ভান্ডারী নামে এক যুবক। জাঁকজমকপূর্ণভাবে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি থেকে নববধূকে নিয়ে গরুর গাড়িতে চড়ে বাড়ি ফেরেন তিনি।
মঙ্গল ভান্ডারী পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার শ্রীনিকেতনের বোলপুর ব্লকের সর্পলোনা আলবাধা পঞ্চায়েতের অন্তর্গত গোবিন্দবালা গ্রামের বাসিন্দা। পাত্রী রাখি দাসের বাড়ি সর্পলোনা আলবাধা গ্রাম পঞ্চায়েতের রতনপুর গ্রামে। দুই বাড়ির মধ্যে দূরত্ব দুই কিলোমিটার। উল্লেখ্য, গত রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মঙ্গল ও রাখি। পরদিন সকালে নববধূকে সঙ্গে নিয়ে গরুর গাড়িতে চেপে নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন মঙ্গল।
এ বিষয়ে বর মঙ্গল জানান, তার মা-বাবাও বিয়ের পর গরুর গাড়ি করেই বাড়ি এসেছিলেন। ফলে পুরনো সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতেই তাদের দেখানো পথেই হেঁটেছেন তিনি। তবে দূরে বিয়ে হলে অন্য কিছু বিবেচনা করতেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে গরুর গাড়িতে চেপে শ্বশুরবাড়িতে আসার বিষয়টি বেশ মনে ধরেছে নববধূ রাখি দাসের। স্বামীর এই চিন্তাভাবনার সাধুবাদও জানিয়েছেন তিনি। তবে মনে ভয়ও ছিল, গরু যদি গুঁতিয়ে দেয়!
উল্লেখ্য, রাখির বেড়ে ওঠা শহরে। কিন্তু পরিবারের কথামতো গ্রামের ছেলেকে জীবনসঙ্গী করেছেন। ফলে গরুর গাড়ি তার কাছে একটু নতুন বটে! এ বিষয়ে রাখি বলেন, ‘আধুনিক যুগে আমরা অনেক কিছুই ভুলতে বসেছি। বর্তমানে গ্রামের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা গরুর গাড়ি, লাঙ্গল এসব চেনে না। তাই সেসব পুরনো ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতেই আমাদের এই ছোট্ট উদ্যোগ।’
তবে সব মিলিয়ে গরুর গাড়িতে চেপে শ্বশুরবাড়িতে আসা এক নতুন অভিজ্ঞতা হলো বলে জানান নববধূ।
অন্যদিকে ব্যতিক্রমী এ বিয়ে গ্রামজুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছে। গ্রামবাসীরাও এই মুহূর্তটিকে নিজেদের মোবাইলে ক্যামেরাবন্দি করতে দেরি করেননি। কেউ কেউ আবার চলন্ত অবস্থাতেই নবদম্পতির সঙ্গে সেলফিও তোলেন।