বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহার পৌরসভার রথবাড়ি, শিবগঞ্জের আলিয়ারহাট ও নন্দীগ্রাম উপজেলায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারিভাবে নির্মাণ করা হয় তিনটি হাসপাতাল। অবকাঠামো থাকলেও জনবল সংকট ও বরাদ্দ না থাকায় ১৮ বছর আগে নির্মিত ২০ শয্যাবিশিষ্ট এ তিনটি হাসপাতালে আজও চালু হয়নি চিকিৎসাসেবা। সব সুবিধা থাকলেও নেই পূর্ণাঙ্গভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম। সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এসব এলাকার অনেক মানুষ। জরুরি সেবা নিতে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে তাদের আসতে হচ্ছে জেলা শহরের হাসপাতালে। এতে নানা বিড়ম্বনায় পড়ছেন রোগীসহ স্বজনরা।
জানা যায়, প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে বগুড়া জেলার আদমদীঘি, শিবগঞ্জ ও নন্দীগ্রাম উপজেলায় নির্মাণ করা হয় ২০ শয্যাবিশিষ্ট তিনটি হাসপাতাল। নির্মাণের ১৮ বছর পার হলেও জনবল সংকট ও বরাদ্দ না থাকায় পূর্ণাঙ্গভাবে এখনো চালু হয়নি চিকিৎসাসেবা। ফলে তিন উপজেলার লাখো মানুষ তাদের কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এদিকে তিনটি হাসপাতালে অবকাঠামোসহ সব সুবিধা থাকলেও নেই শুধু চিকিৎসা কার্যক্রম।
হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট জানান, সরবরাহ অনুসারে কিছু ওষুধ রোগীদের ফ্রিতে বিতরণ করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, নিয়মিত বহির্বিভাগে রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়। এখানে ভর্তি কিংবা অপারেশন করার সুযোগ না থাকায় তাদের জেলা সদরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। শিবগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের উন্নত চিকিৎসার লক্ষ্যে ২০০৫ সালে নির্মাণ করা হয় ২০ শয্যার আলিয়ারহাট হাসপাতাল। প্রথমে আধুনিক অপারেশন থিয়েটারসহ চিকিৎসাসেবার অনেক যন্ত্রপাতিই স্থাপন করা হয় হাসপাতালটিতে। কিন্তু সেবা চালু করা হয়নি। তবে সেখানে রোগী ভর্তি কার্যক্রম শুরু না হলেও চিকিৎসকসহ ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন।
কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রয়োজনীয় বরাদ্দ ও লোকবল নিয়োগের অনুমতি না পাওয়ায় চালু করা যাচ্ছে না হাসপাতালটি। শুরুতে সেখানে কিছু লোকবল নিয়োগ করা হয়েছিল। প্রয়োজনীয় ওষুধ বরাদ্দ ও পর্যাপ্ত সরঞ্জাম না থাকায় হাসপাতালটি চালু করা যায়নি। পরে নিয়োগ করা চিকিৎসকদের স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে হাসপাতালটি চালুর ব্যাপারে দাপ্তরিক কাজ চলছে।
এ ছাড়া ২০০৪ সালে ৩ কোটি ৩৩ লাখ ১২ হাজার টাকা ব্যয়ে আদমদীঘি পৌরসভার সান্তাহারে হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরু হয়। তবে নির্মাণকাজ শেষ না করেই ঠিকাদার বিল তুলে কাজ বন্ধ করে দেন। ২০১৯ সালে মন্ত্রণালয় আবারও ৩ কোটি ১৩ লাখ ৭৯ হাজার টাকায় হাসপাতালের স্টাফ কোয়ার্টারসহ বাকি অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শুরু করে। এ কাজ শেষ হয় ২০২১ সালে। এরপর তিন বছর পার হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। কাগজকলমে ৯ জনবল নিয়োগ দেওয়া হলেও সেখানে চিকিৎসক-নার্স কেউই দায়িত্ব পালন করেন না। মাঝেমধ্যে গেট খুলে বসে থাকেন ফার্মাসিস্ট। কেউ চাইলে তিনি ২-১টি করে ওষুধ লিখে দেন। সান্তাহারে ৯ জন কাগজকলমে কর্মরত থাকলেও তাদের আদমদীঘি উপজেলা ৫০ শয্যা হাসপাতালে সংযুক্ত করা হয়েছে। ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. শাহনাজ পারভীন জানান, ২০ শয্যার তিনটি হাসপাতালে শুধু বহির্বিভাগ চালু রয়েছে। সেখানে ছুটির দিন ছাড়া সব দিনই সেবা দেওয়া হচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ আন্তবিভাগ চালু করতে জনবল ও বরাদ্দের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে।