মসজিদের শিলালিপি ঘেঁটে প্রত্নতত্ত্ববিদরা ধারণা করেন মির্জাপুর শাহী মসজিদটি ১৬৫৬ সালে নির্মাণ করা হয়েছে। সে সময় মালিক উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি মির্জাপুর নামের এ গ্রামটি প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর সে গ্রামে একটি সুনন্দিত মসজিদ নির্মাণ করেন। নাম দেওয়া হয় মির্জাপুর শাহী মসজিদ। এমন জনশ্রুতি রয়েছে এ মসজিদ ঘিরে। শুধু এটাই নয়, ঐতিহাসিক এ মসজিদের নির্মাণ নিয়ে নানা মতপার্থক্যও রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন দোস্ত মোহাম্মদ নামে জনৈক ব্যক্তি মসজিদটির নির্মাণকাজ শেষ করেন। তবে প্রত্নতত্ত্ববিদরা ধারণা করেন, মুঘল শাসক শাহ সুজার শাসনামলে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। জনশ্রুতিমতে ও মির্জা বংশীয় উত্তরসূরিদের অভিমত অনুযায়ী জানা যায়, মির্জাপুর গ্রামের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পূর্বপুরুষ ফুল মোহাম্মদ এ মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করেন। পরে ফুল মোহাম্মদের ভাই দোস্ত মোহাম্মদ নির্মাণ কাজ শেষ করেন। একসময় প্রবল ভূমিকম্পে মসজিদটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রায় ২০০ বছর আগে মুলুকউদ্দিন বা মালিকউদ্দিন এ মসজিদের মেরামত ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ সম্পন্ন করেন। তিনি হুগলির মসজিদের ইমামের মাধ্যমে ইরান থেকে কারিগর এনেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। মসজিদটি কত সালে নির্মিত হয়, এ নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও মুঘল স্থাপত্য নিয়ে একমত সবাই। মসজিদটিতে রয়েছে মুঘল স্থাপত্যরীতির সুস্পষ্ট ছাপ। মসজিদের শিলালিপি ঘেঁটে প্রত্নতত্ত্ববিদরা ধারণা করেন, মির্জাপুর শাহী মসজিদটি ১৬৫৬ সালে নির্মিত। ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দে (সম্ভাব্য) ঢাকা হাই কোর্ট প্রাঙ্গণে নির্মিত মসজিদের সঙ্গে মির্জাপুর শাহী মসজিদের সাদৃশ্য রয়েছে। তাই অনেকে মনে করেন এ মসজিদটিও সমসাময়িক সময়ে নির্মিত। মির্জাপুর শাহী মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট ও প্রস্থ ২৫ ফুট। মসজিদটির সামনের দেয়ালে চিত্রাঙ্কন ও বিভিন্ন কারুকার্য রয়েছে।
যেগুলো একটি অন্যটি থেকে আলাদা। একই সারিতে তিনটি গম্বুজ রয়েছে মসজিদের ওপরে। প্রতিটি গম্বুজের কোনায় একটি করে মিনার রয়েছে। মসজিদে ফারসি ভাষার একটি শিলালিপি রয়েছে। মসজিদের নির্মাণ সম্পর্কে পারস্য ভাষায় লেখা মধ্যবর্তী দরজার উপরিভাগে একটি ফলক রয়েছে। ফলকের ভাষা ও লিপি অনুযায়ী ধারণা করা হয়, মুঘল সম্রাট শাহ আলমের রাজত্বকালে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। মসজিদটির দেয়ালের টেরাকোটায় ফুল এবং লতাপাতার নকশা খোদাই করা রয়েছে। টেরাকোটার নকশার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, একটির সঙ্গে অন্যটির কোনো মিল নেই। মসজিদের রয়েছে একটি খোলা বৃহৎ উঠান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক মির্জাপুর শাহী মসজিদ দেখতে আসেন। প্রতি শুক্রবার শত শত মানুষ এ মসজিদে নামাজ আদায় করে। উঠান ভরে নামাজিরা প্রার্থনা করে।