শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার লঙ্গরপাড়া বাজারে মঙ্গলবার বিকালে আয়োজন করা হয়েছিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা। ঐতিহ্যবাহী এ লাঠিখেলায় মুগ্ধ হয়েছেন দর্শকরা। আয়োজকরা জানিয়েছেন, এ উৎসবে সব বয়সের মানুষের উপস্থিতি জানান দেয় যে, লাঠিখেলা প্রায় হারিয়ে গেলেও এখনো জনপ্রিয়তা রয়েছে এটির। ঢাক-ঢোল বাজিয়ে ছন্দের তালে তালে লাঠির বিভিন্ন ধরনের কসরত দেখিয়ে দর্শকদের মন জয় করে চলছেন লাঠিয়ালরা। ঢোল আর লাঠির তালে তালে নাচানাচি। অন্যদিকে প্রতিপক্ষের হাত থেকে আত্মরক্ষার কৌশল অবলম্বনের প্রচেষ্টাসংবলিত টানটান উত্তেজনার এ খেলায় মুগ্ধ হাজারো দর্শক। নানা কারণে হারিয়ে যেতে বসা এ লাঠিখেলা দেখে দর্শকদের আনন্দের শেষ নেই। এখনো জেলার যেখানেই লাঠিখেলার আয়োজন করা হয় সেখানেই জড়ো হন হাজারো মানুষ। লাঠিখেলার মধ্যে দুই পেন্টি, চারটি লাঠি, দুটি ফালা খেলা, তলোয়ার খেলা, ছুরি খেলাসহ অনেক খেলা দুই দলে বিভক্ত হয়ে প্রদর্শন করেন লাঠিয়ালরা। খেলা দেখে দর্শকরা আনন্দ পান, নিজেরাও আনন্দ পান। এজন্য বৃদ্ধ বয়সেও লাঠি খেলা খেলে চলেছেন লাঠিয়ালরা। বহু পুরোনো এ খেলাকে ধরে রেখেছেন লাঠিয়াল ও বায়ানরা
সত্তরোর্ধ্ব লাঠিয়াল নওশের আলী বলেন, ‘এ খেলাটা আমগরে (আমাদের) গেরামের মানুষেরা খুব পছন্দ করে। আমগরেও (আমাদের) পছন্দের এ খেলা। খেলাডা মানুষ দেইখা আনন্দ পায়। আমরাও আনন্দ পাই। তাই এই খেলাডা খেলাই। এই খেলা তো এহনকার পোলাপান খেলবার পায় (পারে) না। আর আয়োজনও কম কম হয়। আমরা এই খেলার বেশি বেশি আয়োজন চাই।’ আরেক লাঠিয়াল আবদুল মালেক বলেন, ‘আমার বাবাও লাঠি খেলা খেলাইছে। এডা আমগরে (আমাদের) বাপদাদার ঐতিহ্য। এ খেলাডারে ধরে রাখার জন্যই এহনো (এখনো) খেলাই।’ শেরপুর সদরের তালুকপাড়ার আবুল হোসেন নামে এক দর্শক বলেন, ‘লাঠি বাড়ি খেলা দেইখা (দেখে) আমরা খুব আনন্দ পাই। তাই যেখানেই এ খেলার আয়োজন করা হয় সেখানেই আমরা যাই।’ এদিকে, খেলার আয়োজক খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়নের মেম্বার ও বাজার কমিটির সভাপতি মো. মোশাররফ হোসেন নুনি মেম্বার জানান, লাঠি খেলার প্রতি এলাকাবাসীর আগ্রহ অনেক। তারা আমাদের কাছে এই খেলার দাবি করে। এজন্যই বিভিন্ন স্থান থেকে লাঠিয়ালদের নিয়ে এসে লাঠি খেলার আয়োজন করেছি। ঐহিত্যবাহী এ লাঠি খেলাটি নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে ও এটিকে ধরে রাখতে এমন আয়োজন আমরা অব্যাহত রাখব।