ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসকে টার্গেট করেই সব ধরনের প্রস্তুতি শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। এ জন্য আসনভিত্তিক জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন বিভিন্ন দলের নেতারা। বিগত ১৬ বছরে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে মাঠে থাকা দলের নেতারা আসন নিয়ে কিছুটা দোটানায় পড়েছেন। তারা বিএনপির কাছে ‘আসন সমঝোতা’ করতে চাইছেন।
এ প্রসঙ্গে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে আসন নিয়ে কোনো পাকা কথাবার্তা হয়নি। আমরা যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম। বিএনপির পক্ষ থেকে বার্তা দেওয়া হয়েছে নির্বাচনও একসঙ্গে হবে। আমরা যেহেতু দীর্ঘদিন যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম, সেটার প্রভাব সংসদ নির্বাচনেও থাকবে। বিএনপিও আলাপ-আলোচনা করছে, আমরাও করছি। পরিষ্কার বার্তা পেতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।’
বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, মাঠের পরীক্ষিত বন্ধুদের নিয়েই নির্বাচনি বৈতরণী পার হতে চায় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি। সে ক্ষেত্রে ঢাকাসহ সারা দেশেই কিছু আসন ছাড়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে আসন ছাড় দেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। এর মধ্যে আলোচনায় রয়েছে- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবকে লক্ষ্মীপুর-৪, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে বগুড়া-২, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিকে ঢাকা-১২, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর পটুয়াখালী-৩ ও রাশেদ খানের ঝিনাইদহ-২ এবং জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদাকে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন দেওয়া হবে। জানা গেছে, ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরিকদের ৫৮টি আসন ছেড়ে দেয় বিএনপি। অবশ্য সেই নির্বাচনে আগের রাতে ভোট হওয়ায় ভোটের দিন সকালেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় বিএনপিসহ মিত্ররা। এরপর সর্বশেষ ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনও বর্জন করে বিএনপিসহ মিত্ররা। এ পুরো সাড়ে ১৫ বছর বিএনপির সঙ্গে মিত্র দলগুলো আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিল। গত বছরের ৫ আগস্ট গণ অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ফ্যাসিবাদবিরোধী ওই গণ অভ্যুত্থানের আন্দোলনেও বিএনপির সঙ্গে মিত্ররা সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। মিত্র দল ও জোটনেতারা বলছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে সারা দেশে নির্বাচনি প্রস্তুতি চলছে। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা সব আসনেই নির্বাচনি প্রস্তুতি চালাচ্ছেন। যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র দল ও জোটগুলোর শীর্ষ নেতাদের নিজ এলাকায়ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা তোড়জোড় চালাচ্ছেন। বাম জোটের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা যুগপৎ আন্দোলনসহ নানা ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে ছিলাম। ভবিষ্যতেও থাকব। আশা করছি, বিএনপিও এর মূল্যায়ন করবে। আসন্ন সংসদ নির্বাচনসহ বিজয়ী পরবর্তী সরকার গঠনের সময়ে যথাযথ মূল্যায়ন করবে।’ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা যুগপথ আন্দোলনে ছিলাম। ফ্যাসিবাদী লড়াইয়েও ছিলাম। দেশবাসীর প্রত্যাশা আমরাও বিএনপির সঙ্গেই সংসদ নির্বাচন করব। এনিয়ে বিএনপির সঙ্গে আমাদের আলোচনা হবে।’