খুলনায় কৃষি ব্যাংকের রূপসাঘাট শাখার ভল্ট ভেঙে প্রায় ১৬ লাখ টাকা লুট হয়েছে। এ ঘটনায় ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম অজ্ঞাতদের আসামি করে রূপসা থানায় মামলা করেছেন। তবে মামলাটি চুরি মামলা হওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছেন ব্যাংকের গ্রাহক ও আশপাশের ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, ব্যাংকে কলাপসিবল গেট ও দরজার পাঁচটি তালা কেটে ও ভল্ট ভেঙে ১৬ লাখ টাকা লুট করেছে দুর্বৃত্তরা। কিন্তু ‘চুরি’ বলে বিষয়টি গুরুত্বহীন করা হয়েছে।
এদিকে পুলিশ ব্যাংকের তিন নিরাপত্তাপ্রহরীকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সেই সঙ্গে ব্যাংকের কাছাকাছি একটি ওয়ার্কশপের মালিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে। গতকাল ওই ওয়ার্কশপের মালিকের দুটি প্রতিষ্ঠানেও অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে পূর্ব রূপসা বাসস্ট্যান্ডের কাছে কৃষি ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে টাকা নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। রাত ১০টার দিকে ব্যাংকের নিরাপত্তাপ্রহরী আবুল কাশেম ব্যাংকের কলাপসিবলের তালা কাটা দেখে চিৎকার করতে থাকেন। স্থানীয়রা এগিয়ে এসে ঘটনাটি থানায় অবহিত করে। পুলিশ জানায়, ব্যাংকের নিরাপত্তাপ্রহরী আবুল কাশেম শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ব্যাংকে এসে দেখেন কলাপসিবলের তালা ভাঙা। ব্যাংকের ভিতরে গিয়ে দেখেন ভল্ট ভাঙা। নিরাপত্তাপ্রহরী বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানান। ব্যাংকের ক্যাশিয়ার পুলিশের উপস্থিতিতে লেজার ও ক্যাশ মিলিয়ে দেখেন ১৬ লাখ টাকা নেই।
শুক্রবার রাতেই পুলিশ ব্যাংকের তিন নিরাপত্তাপ্রহরী মো. আফজাল, আবুল কাশেম ও তরিকুলকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুলিশ ব্যাংকের ভিতরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ উদ্ধার করেছে। এতে দেখা গেছে, খুলনা-মোংলা সড়কের পাশে তিন তলা ভবনটির দ্বিতীয় তলায় ব্যাংকের মূল ফটকের সামনে কলাপসিবলের তালা ভেঙে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে এক ব্যক্তি ভিতরে প্রবেশ করেন। তিনি মুখের সামনে পত্রিকা জাতীয় একটি কাগজ দিয়ে নিজেকে আড়ালের চেষ্টা করেন। এরপর কৌশলে ব্যাংকের ভিতরের সিসি ক্যামেরার ওপর কাপড় দিয়ে ঢেকে দেন।
ব্যাংকের শাখা ম্যানেজার কামরুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার দিন শেষে ব্যাংকটি বন্ধ হয়ে যায়। ভল্টে ১৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা ছিল। সেখানে ১ হাজার ৪২০ টাকা পাওয়া গেছে। ১৬ লাখ টাকা তারা নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ব্যাংকে তিনজন নিরাপত্তাপ্রহরী পর্যায়ক্রমে দায়িত্বে থাকেন। কিন্তু ঘটনার সময় ব্যাংকে কেউ ছিলেন না।
জানা যায়, শুক্রবার সকালে ব্যাংকে প্রহরার দায়িত্বে থাকার কথা ছিল নিরাপত্তাপ্রহরী আবুল কাশেমের। কিন্তু তিনি ব্যাংকে ছিলেন না। আবুল কাশেম পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন, তাঁর স্ত্রী অসুস্থ থাকায় শুক্রবার সারা দিন তিনি ব্যাংকে ছিলেন না। সকাল ৬টার দিকে ব্যাংক থেকে বের হন। রাত ১০টার দিকে ব্যাংকে এসে গেটের তালা ভাঙা দেখে চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন উপস্থিত হন। রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার বিকালে ব্যাংকটি বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাংক ও আশপাশের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ব্যাংকের ব্যবস্থাপক এ ঘটনায় চুরির মামলা করেছেন। এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম আল বেরুনী জানান, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ব্যাংক লুটের ঘটনা পুলিশ তদন্ত করছে। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।