নির্দিষ্ট সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠান ঘিরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন পেছাতে চায় কমিশন। তবে এটা দুরভিসন্ধিমূলক আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রশিবিরসহ বেশ কিছু সংগঠন। এতে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণা না করেই সভা স্থগিত করেছে কমিশন। নিরপেক্ষতা রক্ষায় নির্বাচন পেছানোর পক্ষে ছাত্রদল। পারস্পরিক মতানৈক্যে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা বাড়ছেই।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এফ নজরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা ভোট কেন্দ্র পরিবর্তন, ছবিসহ ভোটার তালিকার দাবি জানিয়েছে। ডোপ টেস্ট করতেও সময়ের প্রয়োজন। সার্বিক দিক বিবেচনায় কিছুটা সময় দরকার। এর আগে ২৫ আগস্ট প্রথম বর্ষ ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তসহ পাঁচ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেছে শাখা ছাত্রদল। তাদের অন্য দাবি, একাডেমিক ভবনে ভোট কেন্দ্র স্থাপন, হালনাগাদ ছবিসহ ভোটার তালিকা, আবাসিক হলে সব ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করা এবং বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা। দাবি আদায় না হলে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেন দলের নেতারা।
এদিন বেলা ২টায় অনুষ্ঠিত কমিশনের এক জরুরি সভা শেষে নির্বাচন পেছানোর ঘোষণা দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এ ছাড়াও মনোনয়ন বিতরণ ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বৃদ্ধি, একাডেমিক ভবনে ভোট কেন্দ্র স্থাপন, ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রকাশের কথা জানান। তবে তফসিল হওয়ায় প্রথম বর্ষের কারও নির্বাচনে রাখার সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।
এদিকে নির্বাচন পেছানোর ঘোষণার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করেন শাখা ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, সমন্বয়কসহ বিভিন্ন পদের প্রার্থীরা। নির্দিষ্ট দিনেই নির্বাচনের দাবিতে কমিশনকে অবরুদ্ধ করেন তারা। পরে সভা স্থগিত হয়। শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, কমিশনের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, নির্বাচন পেছানোর ঘোষণা দুরভিসন্ধিমূলক। নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র। নির্বাচন পেছানোর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের ঘোষণা না এলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
জিএস পদপ্রার্থী সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, কোনো একটি পক্ষকে সুবিধা দিতে নির্বাচন পেছানোর সুযোগ নেই। নির্বাচন অবশ্যই তফসিল অনুসারেই দিতে হবে। ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মাসুদ কিবরিয়া বলেন, জুলাই গণ অভ্যুত্থানের পর থেকেই রাকসু নির্বাচন নিয়ে কথা হচ্ছে। দিনক্ষণ ঠিক হয়, ফের পেছানো হয়। তফসিলের পরও দুবার সময় পরিবর্তন হলো। এতে কমিশনের প্রতি অনাস্থা বাড়ছে। কোনো পক্ষের সুবিধার জন্য নির্বাচন পেছানোর সুযোগ নেই।
ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে অবশ্যই অংশ নেব। তবে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ও সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। যারা সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত না করেই তড়িঘড়ি করে নির্বাচন চায় তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে। তারা একতরফাভাবে নির্বাচনের স্বপ্ন দেখে। ফলে নির্বাচন পেছানোর ঘোষণা- সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ায় তারা চেঁচিয়ে বেড়াচ্ছে।’ রাকসুর কোষাধ্যক্ষ ড. সেতাউর রহমান বলেন, ‘আমরা সুষ্ঠু ও সংঘাতহীন নির্বাচন দিতে চাই। যেহেতু মতানৈক্য হচ্ছে। ফলে উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’