মধ্যপ্রাচ্যের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ মানচিত্রে বাংলাদেশের পদচিহ্ন এবার আরও দৃঢ হচ্ছে। দেশের ব্যবসায়ীরা গঠন করেছেন সৌদি আরব-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এসএবিসিসিআই), যা দ্বিপক্ষীয় ব্যবসায়িক সম্পর্ক, বিনিয়োগ এবং দক্ষ জনশক্তির রপ্তানিকে নতুন মাত্রা দিতে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এটি শুধু একটি বাণিজ্যিক প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং ৫৩ বছর পর বাংলাদেশের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিচ্ছে। চেম্বারের নেতৃত্বে থাকা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তারা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বাজারে আরও শক্তিশালীভাবে পরিচিত করাতে চাইছে, বিশেষ করে দক্ষ জনশক্তি, হেলথকেয়ার সেবা, নার্সিং, আইটি এবং অন্যান্য সেবা খাতে। সৌদি আরবে প্রায় ৩০ লাখ বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছে। তাদের অংশগ্রহণ শুধু শ্রমিকরূপে সীমাবদ্ধ নয়, তারা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এই বাস্তবতা কাজে লাগাতে চাইছেন। এই চেম্বারের মাধ্যমে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছেন। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পর্যটন, জনশক্তি রপ্তানি এবং শিক্ষা ও সেবা খাত। সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০ এবং ২০৩৪ সালের বিশ্বকাপের প্রস্তুতির সঙ্গে বাংলাদেশি দক্ষ জনশক্তি সংযুক্ত হলে, তা দ্বিপক্ষীয় উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
গত অর্থবছরে সৌদিতে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ২৯ কোটি ডলার; যা চলতি অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ কোটি ডলারে। অন্যদিকে দুই দেশের মোট বাণিজ্য এখন প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে অপরিশোধিত তেলসহ সার ও কাঁচামাল আমদানি হয়।
সৌদি আরব-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং তিন দিনের বিজনেস সামিটে যোগ দিতে আজ বিকালে সৌদি আরবের ব্যবসায়ী ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসছেন। আজ রাতে সৌদি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। আগামীকাল সকালে রাজধানীর হোটেল শেরাটনে বিজনেস সামিট অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে দুই দেশের উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞরা যৌথ বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করবেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। একই দিন সন্ধ্যায় চেম্বারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। সেখানে প্রধান অতিথি থাকবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। পরদিন ৮ অক্টোবর হোটেল সোনারগাঁওয়ে সমাপনী সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিন দিনব্যাপী আয়োজন শেষ হবে।
এসএবিসিসিআই সভাপতি আশরাফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ব্যবসায়ী মহল অনেক আগেই সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা বাস্তবায়িত হয়নি। এবার আমরা সে মাইলফলক অর্জন করতে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে নতুন কোনো বাজারে প্রবেশ করছি না, আমাদের লোকজন ইতোমধ্যেই প্রভাব বিস্তার করছে। আমাদের অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে আমরা ব্যবসায়িক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই। আমরা চাই এই প্ল্যাটফর্ম নতুন উদ্যোক্তাদের জন্যও খোলা হোক, যারা প্রথমবার সৌদি বাজারে প্রবেশ করছে। তারা এখানে এসে ব্যবসায়িক সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও শেখার সুযোগ পাবে।’ এসএবিসিসিআই-এর সহসভাপতি আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ বলেন, ‘আমাদের চেম্বারের লক্ষ্য শুধু সৌদি বিনিয়োগ আনা নয়, বরং সৌদি আরবে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদেরও যুক্ত করে দুই দেশের ব্যবসায়িক সুযোগ আরও প্রসারিত করা।’ প্রাণ আরএফএল গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরী বলেন, ‘আমরা প্রায় ২৫ বছর ধরে সৌদি বাজারে বিভিন্ন পণ্য সরবরাহ করছি। তবে এখন ব্যবসায়ীরা আরও নতুন ধরনের পণ্য ও সেবা যেমন আইটি সেবা, নার্সিং সেবা সৌদি বাজারে পৌঁছে দিতে চাইছেন। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আমজাদ খান চৌধুরী নার্সিং কলেজ, যা দক্ষ জনশক্তিকে আন্তর্জাতিক মানে প্রশিক্ষিত করছে।’