অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, অমর একুশে বইমেলা যথাসময়েই হবে। বইমেলা হবে না বলে যা বলা হচ্ছে তা সঠিক নয়। তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি প্রকাশকদের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবে, যা সবার জন্যই গ্রহণযোগ্য হবে। আমি মনে করি হতাশ হওয়ার কিছু নেই। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে অনুষ্ঠিত ‘কেমন বই মেলা চাই’ শীর্ষক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রেস সচিব বলেন, কেমন বইমেলা চাই যদি বলতে হয়, বলতে হবে আমরা এমন একটি বইমেলা চাই যেখানে সব শ্রেণির পাঠকের পছন্দের বই পাওয়া যাবে। আবার সব লেখকের বইও পাওয়া যাবে। পাঠক তার ইচ্ছে মতো প্রয়োজনীয় বইটি নেবেন। তাকে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। পাঠক যদি তার পছন্দের বইটি বইমেলা থেকে নিতে পারেন তবেই সেই বইটি তার জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করবে। বিগত সরকারের সময়ে বিশেষ শ্রেণির দালাল প্রকাশক ও দালাল লেখকদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, শেখ পরিবারের নামে বই প্রকাশ, জোর করে বিক্রি করে অনেকেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। টুঙ্গিপাড়ায় পুকুর পাড়ে বসে তিনি কী করেছেন সেটা দিয়েই বই লিখে মানুষকে কিনতে বাধ্য করা হয়েছে। এগুলো জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেনি। যারা এসবের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারাই আজ বলছেন আমাদের প্রজন্ম বই পড়ছে না। নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, এভাবে বই লিখে ও বিক্রি করে এক সাংবাদিক ১১ কোটি টাকার বই বিক্রি করেছেন। কিছু কিছু প্রকাশনাও এমন করেছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের বই নিয়ে, বইমেলা নিয়ে গত ১৫ বছর এমনটা হয়েছে। তাই আমরা এমন একটা বইমেলা চাই যেখানে যার যা পাঠের প্রয়োজন ঠিক সেই রকম বই সংগ্রহ করুক। কেউ ইতিহাস পড়বেন, কেউ পড়বেন বিজ্ঞান, কেউবা রাজনীতি, কেউ সাহিত্য, গল্প, কবিতা ইত্যাদি সবকিছু নিয়েই কিন্তু প্রাণের বইমেলা। একই ভাবে কোনো প্রকার বৈষম্য সৃষ্টি করা যাবে না। আমরা চাই এমন একটা মেলা যা হবে বৈষম্যবিরোধী। এবারের বইমেলাটি যেন আরও সুন্দর হয় সেই প্রত্যাশাও আমাদের সবার। জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হান বলেন, যারা বইমেলাকে বন্ধ করতে চায় তারা জুলাইয়ের আন্দোলন অর্জনকে বিতর্কিত করতে চায়। সুতরাং বইমেলা ফেব্রুয়ারিতেই হতে হবে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ এবং একুশে ও জুলাইর আন্দোলন অর্জনকে একটি শ্রেণি ভূলুণ্ঠিত করতে চায়। বইমেলা আমাদের সংস্কৃতির অংশ। বইমেলা হবে না এ কথা বলাই যাবে না।
তিনি বলেন, প্রয়োজনে নির্বাচনের কয়েক দিন মেলা বন্ধ রেখে পরে সময় বাড়ানো যেতে পারে। তবে ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা না হলে মনে হবে ফ্যাসিস্ট শক্তির দোসররা ষড়যন্ত্র করে মেলা বন্ধ করতে চাইছে। তাই সরকারের কাছে দাবি- বইমেলা যেন ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই শুরু হয়।
গাজীউল হাসান খান প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নাম উল্লেখ করে বলেন, তাঁর মতো বিজ্ঞ এবং উন্নত মানসিকতার নেপথ্যেও রয়েছে বই। সুতরাং আমাদের প্রাণের বইমেলা হতেই হবে। নির্বাচনের সময়েও অতীতে মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কবি গবেষক ফয়েজ আলম বলেন, বইমেলার জনপ্রিয়তার গন্ডি দেশকে ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী। তাই ফেব্রুয়ারিকে প্রাধান্য দিয়ে ছোট পরিসরে হলেও বইমেলা হওয়া উচিত।
অনুষ্ঠানে ১৭টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল গ্রন্থ প্রকাশক সমিতি আয়োজিত এই সভায় সমিতির সভাপতি সাঈদ বারীর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তৃতা করেন সাংবাদিক লেখক সিরাজুল ইসলাম কাদির, সিনিয়র প্রকাশক গফুর হোসেন, কাজী জহিরুল ইসলাম বুলবুল, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ফাতেমা আখতার, এআইইউবির শিক্ষার্থী দাহেকা আঞ্জুম সাদিয়া ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হাসান।