দেশের শেয়ারবাজারে অস্থিরতা কাটছে না। বাজারে দফায় দফায় গুজব ছড়ানো এবং তথাকথিত ‘গুজব সিন্ডিকেটের’ সক্রিয় ভূমিকার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরছে না। গুজবের ফাঁদে পড়ে অনেকে নিঃস্ব হচ্ছেন। অনেকেই আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষের নানা পদক্ষেপ সত্ত্বেও পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। অস্থিতিশীলতার কারণে গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে অনেকে বাজার থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির শেয়ার ঘিরে নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। কখনো শেয়ার বিভাজন, কখনো বড় লভ্যাংশ বা নতুন বিনিয়োগের গুঞ্জন তুলে দাম বাড়ানো হয়, আবার হঠাৎ করেই দাম নামিয়ে দেওয়া হয়। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছেন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারে অস্বাভাবিক লেনদেন ও দরবৃদ্ধির কারণে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে একাধিক কোম্পানির শেয়ার নিয়ে গুজব তৈরি করে অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে সতর্কবার্তা দিয়েছে ডিএসই। কিছু কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে কয়েক দিনে অস্বাভাবিক লাভ এমন প্রলোভনে হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের ফাঁদে ফেলছে প্রতারক চক্র। এরই মধ্যে এই প্রতারক চক্রের অনেকে কিছু বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে।
[পেছনের পৃষ্ঠার পর] হোয়াটসঅ্যাপে এ ধরনের বেশ কিছু প্রতারক চক্রের সন্ধান পেয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। এসব প্রতারক চক্রের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করেছে সংস্থাটি। এখন বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। ডিএসইর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপে একাধিক প্রতারক চক্র শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বলে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। শেয়ার কিনলে কয়েক দিনের মধ্যে অস্বাভাবিক মুনাফার কথা বলে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু শেয়ারবাজারে এ ধরনের মুনাফার নিশ্চয়তা দেওয়ার সুযোগ নেই। অনেক বিনিয়োগকারী এ ধরনের প্রতারক চক্রের প্রলোভনে পড়ে অর্থ খুইয়েছেন বলেও জানতে পেরেছে ডিএসই।
বাজারের এই অস্থিরতার কারণে চলতি বছরের প্রথম নয় মাসেই প্রায় ৩০ হাজার বিনিয়োগকারী তাদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব বন্ধ করেছেন। একই সময়ে আরও প্রায় ৩২ হাজার বিনিয়োগকারীর হিসাব শেয়ারশূন্য হয়ে গেছে। অর্থাৎ, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তত ৬২ হাজার বিনিয়োগকারী বাজার থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিও হিসাব ছিল ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৪৫২টি। ২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এ সংখ্যা নেমে আসে ১৬ লাখ ৩২ হাজার ২২৭-এ। এর মানে মাত্র নয় মাসে কমেছে ৩০ হাজার ২২৫টি বিও হিসাব।
বিএসইসির পরিচালক মো. আবুল কালাম বলেন, বাজারে গুজব ছড়ানো ও শেয়ার দরে কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। ইতোমধ্যে সন্দেহভাজন ট্রেডারদের নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। গুজবের মাধ্যমে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করলে বিএসইসি কঠোর পদক্ষেপ নেবে।
জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মানুষের আস্থা অর্জন কতে হলে কার্যকর পদক্ষেপ থাকতে হবে। কয়েকজন লোককে শাস্তি দিলেই শেয়ারবাজারে আস্থা ফিরে আসবে না। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে যদি লোকসান হয় তবে কীভাবে আস্থা ফিরবে। বাজারে সুশাসন ফিরলে এবং গুজব সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে এলে আস্থা ফিরবে। বিনিয়োগ সংস্কৃতি গড়ে তোলাই এখন সময়ের দাবি। গুজবনির্ভর অস্থিরতা কাটিয়ে সঠিক পদক্ষেপ নিলেই বাজার আবার স্থিতিশীল হবে।