গোটা বিশ্ব জুড়েই প্রতিদিন নানাবিধ রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এর মধ্যে একটি মরণঘাতী একটি ব্যাধি হচ্ছে কিডনী রোগ। এ রোগে আক্রান্ত হলে ভোগান্তিও অনেক। তবে কিডনী রোগে আক্রান্ত হলে বেঁচে থাকার দুটি উপায়- ডায়ালাইসিস ও কিডনী প্রতিস্থাপন। এ চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং সুযোগও সীমিত।
এ কারণে অধিকাংশই এ রোগের চিকিৎসা করাতে ব্যর্থ হয়। সারা দেশে সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে হেমোডায়ালাইসিস যন্ত্র আছে সাড়ে পাঁচশ’র কিছু বেশী, যা দিয়ে সর্বসাকুল্যে তিন হাজার রোগীর ডায়ালাইসিস করা সম্ভব। কিডনী বিকল হওয়া রোগীদের বাঁচিয়ে রাখার অপর বিকল্প হচ্ছে কিডনী প্রতিস্থাপন বা ট্রান্সপ্লান্ট। প্রতিস্থাপন আরও ব্যয়বহুল। সাধারণত রোগীর আত্মীয় স্বজন এ অবস্থায় কিডনী দান করে থাকেন। সরকারী প্রতিষ্ঠানে এক লাখ ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ আট লাখ টাকার মতো খরচ হয়ে থাকে।
কিডনী রোগের উপসর্গ:
কিডনী রোগের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, প্রথম দিকে এ রোগের কোনো উপসর্গ থাকে না। কিন্তু যখন উপসর্গ ধরা পড়ে ততক্ষণে কিডনীর প্রায় ৮০ ভাগই বিকল হয়ে পড়ে। এরপর আর তেমন কিছু করার থাকে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিডনী বিকল হওয়ার কারণ তিনটি- নেফ্রাইটিস (ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, ভাইরাসজনিত হেপাটাইটিস, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, ভেজাল খাবার ইত্যাদি), ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ।
চল্লিশোর্ধ্ব বয়সী মানুষের উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস থাকলে তার কিডনী রোগের ঝুঁকি বেশী। বংশগত কারণেও কিডনী রোগ হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্ষুধামন্দা, বমিভাব, রক্তস্বল্পতা, অল্পতে হাঁফিয়ে যাওয়া, ঘুম না হওয়া ইত্যাদি কিডনী রোগের উপসর্গ। স্মর্তব্য, ঘোলাটে দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব অথবা কোমরের পেছনের দিকে ব্যথা করলে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।
কিডনী রোগ প্রতিরোধের উপায়:
১. আমাদের সবারই প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত।
২. প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা প্রয়োজন।
৩. যেহেতু উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগীদের কিডন রোগের ঝুঁকি বেশি, তাই এ রোগ দুটি অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন।
৪.খাবার লবণ কম খাওয়াই বাঞ্ছনীয়।
৫. আমাদের মধ্যে অনেকেই নিয়মিত ব্যথানাশক হিসেবে প্যারাসিটামল বা এসপিরিন খেয়ে থাকেন যা কিডনীর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তবে যদি কোনো রোগের জন্য এ ধরনের ওষুধ নিয়মিত নেয়ার প্রয়োজন হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া বাঞ্ছনীয়।
এছাড়া স্বাস্থ্য সচেতনতা তথা কিডনী রোগ সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। সবাইকে বছরে অন্তত একবার সিরাম ক্রিয়েটিনিন এবং প্রস্রাবে এলবুমিন নির্গতের পরিমাণ পরীক্ষা করা উচিত। প্রাথমিক অবস্থায় কিডনী রোগ ধরা পড়লে ওষুধের মাধ্যমে তা সুস্থ করে তোলা সম্ভব। এছাড়া কিডনী রোগের চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে আরও ক্লিনিক ও হাসপাতাল স্থাপন করা অতীব জরুরী।
সূত্র: উইকিপিডিয়া ও হেলথ সায়েন্স
বিডি প্রতিদিন/২১ মে ২০১৭/ ই জাহান