২৪ মে, ২০১৯ ১৩:০৬

জেনে নিন ভারতের নির্বাচনে ভোট গণনার পদ্ধতি

অনলাইন ডেস্ক

জেনে নিন ভারতের নির্বাচনে ভোট গণনার পদ্ধতি

২৩ মে ভারতে অনুষ্ঠিত হলো ১৭তম লোকসভা নির্বাচনের ভোটগণনা। এর আগে ১১ এপ্রিল থেকে শুরু করে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত ৭ দফায় ভারতের ২৯টি রাজ্যে ভোটগ্রহণ হয়।

বিভিন্ন দেশে ভোটগণনায় কারচুপির অভিযোগ আনা হয়। ফলে ফলাফল প্রকাশের পর তা প্রত্যাখ্যানেরও হিড়িক পড়ে যায়। চলুন দেখে নিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতে কীভাবে ভোটগণনা করা হয়।

ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের স্পষ্ট নির্দেশ, রিটার্নিং অফিসার ভোট গুণবেন। প্রত্যেক কেন্দ্রের জন্য একজন রিটার্নিং অফিসার মনোনয়ন করে কেন্দ্রীয় সরকার। তিনি সাধারণভাবে কোনও অফিসার পর্যায়ের ব্যক্তি হন বা কোনও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রিটার্নিং অফিসার হন সংশ্লিষ্ট জেলার জেলাশাসক।

অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসাররাও গণনা পরিচালনার আইনমাফিক দায়িত্বে থাকেন, রিটার্নিং অফিসার একাধিক কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকলে তিনিই দায়িত্ব নেন।

কোথায় ভোট গণনা হয়?

কমিশন ভোট গণনার সময় ও তারিখ স্থির করে দেয়। গণনার জায়গা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেন রিটার্নিং অফিসার। রিটার্নিং অফিসারের সদর দফতরকেই সাধারণভাবে প্রাথমিক পছন্দ হিসেবে ধরা হয়। তবে কেন্দ্রের বাইরেও গণনাস্থল হলে সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কোনও আইনি আপত্তি থাকে না।

কোনও একটি নির্দিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রের গণনা এক জায়গাতেই হয়ে থাকে।

তবে এবার কমিশনের নির্দেশ ছিল, একটি লোকসভা কেন্দ্রের প্রতিটি বিধানসভার ভোট গণনা আলাদা আলাদা হলে করতে হবে এবং কোনও পরিস্থিতিতেই এক হলের মধ্যে একাধিক কেন্দ্রে ভোট গণনা করা যাবে না।

প্রতিটি কাউন্টিং হলে এক একটি আালাদা ঘর হতে হবে যার দেওয়াল তো থাকবেই, ঘরে ঢোকার ও বেরোনোর আলাদা ব্যবস্থা থাকাও বাঞ্ছনীয়। যদি দেওয়াল সমেত ঘর একান্তই না পাওয়া যায়, তাহলে একটি বড় ঘরকে ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে অস্থায়ী পার্টিশনের মাধ্যমে।

একটি কাউন্টিং হলে ১৪টির বেশি কাউন্টিং টেবিল থাকবে না। তবে রিটার্নিং অফিসারের টেবিল এর মধ্যে নয়।

গণনা কেন্দ্রে থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে পায়ে চলা রাস্তা থাকবে, যা ব্যারিকেড করে রাখতে হবে। তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখতে হবে।

প্রথম বলয়ে পায়ে চলা রাস্তা, দ্বিতীয় বলয় গণনাস্থল এবং তৃতীয় বলয়, কাউন্টিং হলে ঢোকার দরজা। এর দায়িত্বে থাকবে যথাক্রমে পুলিশ, রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ, কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী।

কাউন্টিং হলে কেবলমাত্র নিম্নলিখিতরা প্রবেশ করতে পারবেন-

গণনা পর্যবেক্ষক, গণনা সহকর্মী, মাইক্রো অবজার্ভার, নির্বাচন কমিশন অনুমোদিত ব্যক্তিবর্গ এবং অবজার্ভাররা, নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তা এবং প্রার্থী, নির্বাচনী এজেন্ট, এবং কাউন্টিং এজেন্টরা। পুলিশ অফিসার এবং মন্ত্রীরা এ ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তার পর্যায়ভুক্ত নন।

নির্বাচন কমিশন দ্বারা নিযুক্ত পর্যবেক্ষক ছাড়া আর কেউই কাউন্টিং হলে মোবাইল ফোন নিয়ে যেতে পারবেন না।

আসল গণনা কারা করেন?

রিটার্নিং অফিসাররা কাউন্টিং এজেন্টদের নিয়োগ করেন। গণনা কর্মীদের সংখ্যা নির্ভর করে কাউন্টিং হলের সংখ্যা, প্রতি হলে টেবিলের সংখ্যার উপর। প্রতি টেবিলের জন্য একজন গণনা পর্যবেক্ষক থাকবেন।

কী পদ্ধতিতে গণনা করা হয়?

নির্দিষ্ট সময়ে যেখানে ইভিএম রাখা হয়ে থাকে, সেই স্ট্রং রুম খোলা হয় রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের উপস্থিতিতে, প্রার্থী বা নির্বাচনী এজেন্ট এবং কমিশনের পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে। লগ বুকে তথ্য লেখার পর সিল পরীক্ষা করে দেখা হয় তালা ঠিক রয়েছে কিনা। এই গোটা প্রক্রিয়ার সময়-তারিখসহ ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়।

সমস্ত ইভিএম একটি নির্দিষ্ট রাউন্ড গোনার পর এবং কমিশনের পর্যবেক্ষকরা দুটি যে কোনও ইভিএমের সমান্তরাল গণনার পর, একটি রাউন্ডের ট্য়াবুলেশন করা হয় এবং রিটার্নিং অফিসার সেই রাউন্ডের ফল ঘোষণা করেন এবং সে সম্পর্কিত নথিতে স্বাক্ষর করেন।

এরপর পরের রাউন্ড গণনার মৌখিক সম্মতি দেন রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসার।

ভিভিপ্যাট স্লিপ কীভাবে গণনা করা হয়?

এই প্রথমবার লোকসভা আসনের ভিভিপ্যাট গণনা বাধ্যতামূলক করা হয়। প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রের যেকোনও পাঁচটি বুথের ইভিএম গণনা করা হচ্ছে এবার। সুপ্রিম কোর্ট গত ৮ এপ্রিল এই নির্দেশ দেয়।

সব ইভিএম গণনাা হয়ে যাওয়ার পর ভিভিপ্যাটের সঙ্গে মেলানো হয়। এই গণনা পর্যায়ক্রমিক হবে না। একটি ভিভিপ্যাট মেশিনের স্লিপ গুণতে মোটামুটি এক ঘণ্টা সময় লাগে। যদি ভিভিপ্যাট এবং ইভিএমের মধ্যে সংখ্য়াগত ফারাক দেখা যায়, সেক্ষেত্রে ভিভিপ্যাটের ফলই গণ্য হয়।

বিডি প্রতিদিন/কালাম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর