বরিশালে শহীদ আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যালয়ের নামে জেলা প্রশাসনের লীজ দেয়া অর্পিত সম্পত্তি কোনো ভাবেই বেহাত হতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশালে নির্মাণাধীন শিল্পকলা একাডেমি পরিদর্শন ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
এসময় তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে প্রভাবশলী কেউ নেই। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) যেখানে কাউকে ছাড় দেন না, সেখানে সাংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ছাড় দেয়ার কে? শহীদ আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যালয়ের নামে লীজ দেয়া জমি যাতে কোনোভাবেই হাতছাড়া না হয় সে জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওই জমি সরকারের ছিল, আছে এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
বরিশাল নগরীতে কবি জীবনানন্দ দাশের বিলুপ্ত পৈত্রিক বাড়ি উদ্ধারের বিষয়ে সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বরিশালের জেলা প্রশাসক জীবনানন্দ কমপ্লেক্স এবং একটি ভাস্কর্য নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। ভাস্কর্য নির্মাণ প্রকল্পে তিনি সন্মতি এবং অর্থায়নের ঘোষণা দিয়েছেন। সরকার সারা দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে, ওই প্রকল্পের আওতায় জীবনানন্দ দাশের স্মৃতি রক্ষার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। কেউ যদি জীবনানন্দ দাশের পৈত্রিক ভিটার মালিকানা নিয়ে থাকেন তাহলে অধিগ্রহণ করে সেই জমি পুনরুদ্ধার করার কথা বলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, বরিশাল নগরীতে শহীদ আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যালয়ের নামে জেলা প্রশাসনের লিজ দেয়া অর্পিত সম্পত্তি নিজের দাবি করে আদালতে অবমুক্তির মামলা করেন স্থানীয় শিল্পপতি বিজয় কৃষ্ণ দে’র স্ত্রী শৈল বালা দে। বর্তমানে ওই মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন সংবাদ প্রকাশ করলে বরিশালসহ সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
এদিকে, নগরীর বগুড়া রোডে কবি জীবনানন্দ দাশের পৈত্রিক বাড়ির জমি জেলা প্রশাসন থেকে নিলাম কিনে বসবাস করছে কয়েকটি পরিবার। বর্তমানে তার বাড়ির কোনো চিহ্ন নেই সেখানে।
এর আগে, সকাল সোয়া ১১টায় প্রতিমন্ত্রী নগরীর বান্দ রোডের পাশে নির্মাণাধীন জেলা শিল্পকলা একাডেমি পরিদর্শন করেন। এ সময় আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে একাডেমি ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করে কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দিতে ঠিকাদারকে নির্দেশ দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী। এখানেই আগামী ১৭ মার্চ মুবিজ বর্ষের অনুষ্ঠান করার কথা বলেন তিনি।
পরে নির্মাণাধীন ভবনে স্থানীয় সুধীজন এবং সাংস্কৃতিক কর্মীদের সাথে এক মতবিনিময় সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রতিমন্ত্রী।
জেলা প্রশাসক ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি এসএম অজিয়র রহমানের সভাপতিত্বে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও বক্তব্য রাখেন প্রবীণ সাংবাদিক সংস্কৃতিজন এসএম ইকবাল, বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ সভাপতি কাজল ঘোষ, সৈয়দ দুলাল, গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহমেদ আনোয়ারুল ইসলাম নজরুল, মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মো. জাহাঙ্গীর মল্লিক এবং জেলা কালচারাল অফিসার হাসানুর রশীদ মাকসুদ। সভা শেষে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান উপভোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমী ভবন বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত বিভাগ। ২০১৭ সালে কাজ শুরু হওয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির নির্মাণ কাজ চলতি ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ধীরগতির কারণে এখনও কাজ শেষ করতে পারেনি তারা।
৫০০ আসন বিশিষ্ট শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি অডিটোরিয়াম, মুক্তমঞ্চ এবং চার তলা বিশিষ্ট ভবন হচ্ছে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন