বর্তমানে জিরো ফিগার করা নিয়ে বিশ্বজুড়ে নারীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এ প্রতিযোগিতার ইঁদুড় দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে সেলিব্রেটিরা। ডায়েট করছেন কোন নিয়ম না মে্নেই। সেই দৌড়ে অংশ নিয়ে এখন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে মার্কিন অভিনেত্রী ও মডেল রাচায়েল। শরীরে বাসা বেঁধেছে এক মারণ রোগ। ৩৭ বছরের এ নারীর ওজন এখন মাত্র ১৮ কেজি। কঙ্কালসার শরীরটি ধীরে ধীরে ঢলে পড়ছে মৃত্যুর কোলে। বাঁচার শেষ আশায় সোশ্যাল মিডিয়ায় চিকিত্সার জন্য চেয়েছেন অর্থ সাহায্য। ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা রাচায়েল ফারকের শেষ আর্তি, 'আমার নাম রাচায়েল। আমি আপনার সাহায্য চাই। আপনার সাহায্য আমার খুব প্রয়োজন।'
কয়েক বছর আগেও অভিনয় ও মডেলিংই ছিল রাচায়েলের পেশা। তার পেছন পেছন ক্যামেরা নিয়ে ঘুরত পাপারাজ্জিদের দল। অটোগ্রাফ নিতে ছুটে আসতো অনেকে। ছিল না বন্ধু-বান্ধবের অভাব। আজ তাকে দেখলে চমকে উঠতে হয়। জীবন্ত কঙ্কাল। কারও সাহায্য ছাড়া দাঁড়াতে পারেন না। শুতে গেলে হাড় বিঁধে শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা হয়। কিছু মুখে দিলেই বমি। শরীরের প্রত্যেকটি হাড় গোনা যায়। হৃদস্পন্দন বাইরে থেকে দেখা যায়। আগে যারা তার আশপাশ ঘিরে থাকতো, আজ তারা তাকে এগিয়ে চলে।
শরীরে যাতে একটুও মেদ না থাকে, সেই অভিপ্রায়ে ডায়েট শুরু করেছিলেন এ অভিনেত্রী। খাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। না খাওয়াই শেষ পর্যন্ত কাল হল রাচায়েলের জীবনে। এভাবে অতিবাহিত হয় এক দশকেরও বেশি সময়। দিনের পর দিন না খাওয়ার ফলে তার শরীরে বাসা বাঁধে অ্যানোরেক্সিয়া রোগ। এখন আর কিছু খেতেই পারেন না প্রাক্তন এই অভিনেত্রী। শরীরের ওজন এতটাই কম যে, দেশের কোনও হাসপাতাল ভর্তি নিতে চাইছে না রাচায়েলকে। ন্যূনতম চিকিত্সা নেওয়ার মত শক্তিও নেই শরীরে।
যে কোন সময় হয়তো প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাবে। চিকিত্সকরা জানিয়ে দিয়েছেন, না খেয়ে রাচায়েলের কিডনি, লিভার প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। হার্টের অবস্থাও শোচনীয়। যে কোনও সময় স্পন্দন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। চিকিত্সার বিপুল খরচ জোগাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেদনের পাশাপাশি GoFundMe নামে একটি পেজও তৈরি করেছেন রাচায়েল ও তার স্বামী। সেই পেজেই বিশ্ববাসীর কাছে তাদের আর্জি, 'কিছু অর্থ সাহায্য করে অন্তত জীবনটা বাঁচান'।
অ্যানোরেক্সিয়া কী?
চিকিত্সার পরিভাষায় এই রোগের পুরোনাম অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা। ইটিং ডিজঅর্ডার। শুধু রাচায়েলই নয়। বিশ্বে বহু মডেল ও অভিনেত্রীর এই মারণরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। এখনও অনেকেই কোনও ক্রমে বেঁচে রয়েছেন। চিকিত্সকরা জানাচ্ছেন, অতিমাত্রায় ডায়েট থেকেই অ্যানোরেক্সিয়া হয়। ডায়েট করতে করতে একসময় মানসিকভাবেই এমন এক পর্যায় আসে, তখন আর কিছুই খেতে ইচ্ছে করে না। খাদ্যনালী শুকিয়ে যায়। খাবার পড়লেই বমি হয়ে যায়। ২০১৩-তেই গোটা পৃথিবীতে এই রোগে মৃত্যু হয়েছে ৬০০ জনের। অ্যানোরেক্সিক মডেলদের র্যাম্পওয়াক বন্ধ করতে দুনিয়ার বহু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিবাদে সোচ্চার। কিন্তু তা সত্ত্বেও কেরিয়ারকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে বহু মডেল ও অভিনেত্রীই অতিমাত্রায় ডায়েট করে, কার্যত না খেয়ে অ্যানোরেক্সিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন প্রতি বছর।
বিডি-প্রতিদিন/২৪ মে ২০১৫/ এস আহমেদ