দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে হুঙ্গা টোঙ্গা-হুঙ্গা হাপাই আগ্নেয়গিরির ব্যাপক অগ্ন্যুৎপাত ঘটে। এর প্রভাব এখনও বিশ্বজুড়ে আবহাওয়ায় অনুভূত হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই অগ্ন্যুৎপাতের ফলে স্ক্যান্ডিনেভিয়াসহ ইউরোপের শীতলতা আরও তীব্র হবে এবং বাল্টিক সাগরে বরফের স্তর নতুন করে জমতে শুরু করবে। কয়েক দশক পর বাল্টিক সাগরে বরফের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই অগ্ন্যুৎপাতের সময় প্রায় ১০ থেকে ১৫ কোটি টন সমুদ্রের পানি স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে পৌঁছায়, যা ৬০ হাজার অলিম্পিক আকারের সুইমিং পুল পূর্ণ করতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা জানান, এর ফলে ২০২৩ সালে ওজোনস্তরে বড় একটি ছিদ্র তৈরি হয়। এই ছিদ্রের প্রভাবে ২০২৪ সালে অস্ট্রেলিয়া শুষ্ক গ্রীষ্মকাল পার করেছে। গবেষকরা সতর্ক করেছেন, এই ধরনের অগ্ন্যুৎপাতের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি এবং তা জলবায়ুর ওপর বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।
এদিকে বিজ্ঞানীরা উপগ্রহের সাহায্যে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে জমা হওয়া জলীয় বাষ্পের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করছেন। ১৯৭৯ সাল থেকে এমন পর্যবেক্ষণ চালানো হলেও, টোঙ্গার অগ্ন্যুৎপাত ওজোনস্তরের ক্ষতির মাত্রা আরও বাড়িয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন। এ বছর স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলে তীব্র শীতের সম্ভাবনা রয়েছে। সাম্প্রতিক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, ২০২৯ সাল পর্যন্ত উত্তর অস্ট্রেলিয়া ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় শীতের পরিমাণ বাড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞ মার্টিন জুকার জানান, স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় শীতকালে তাপমাত্রা ১ থেকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে এবং ১৯৮০-এর দশকের মতো বরফাচ্ছন্ন দশক ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন বাল্টিক সাগরের প্রায় ৯৬ শতাংশ বরফে আচ্ছাদিত ছিল।
এদিকে, আবহাওয়াবিদরা বলছেন, লা নিনা পরিস্থিতির কারণে ইউরোপেও এবারের শীতকাল অতীতের চেয়ে বেশি শীতল হবে। অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৬০ শতাংশ সম্ভাবনায় এই পরিস্থিতি দেখা যেতে পারে বলে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এটা আল্পস পর্বতমালায় ঘন ঘন তুষারপাতের সম্ভাবনাও বাড়াবে।
বিশ্বব্যাপী আবহাওয়ার এই পরিবর্তন প্রকৃতপক্ষে টোঙ্গার অগ্ন্যুৎপাত ও লা নিনা প্রভাবের সম্মিলিত ফল। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন, এই প্রভাব আরও কয়েক বছর ধরে অব্যাহত থাকতে পারে এবং বিশ্বজুড়ে আবহাওয়ায় অসামঞ্জস্য সৃষ্টি করতে পারে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল