পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুতে কবর দিতে দেখা গেছে। এমনকি বাড়ির প্রিয় পোষ্য প্রাণীটির মৃত্যুর পরেও অনেকেই তাদের কবর দিয়ে থাকে। কিন্তু তাই বলে আস্ত একটা গাড়িকে কবর দেওয়ার কথা কেউ কি কখনো শুনেছে! এমনটাই ঘটেছে ভারতের গুজরাটে।
রাজ্যটির আমরেলি জেলার লাথি তালুকার অন্তর্গত পদরসিংহ গ্রামের এক ব্যক্তি ১২ বছরের পুরনো তার প্রিয় ‘লাকি গাড়ি’টিকে কবর দিয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল শনিবার। প্রিয় গাড়িটিকে কবর দেওয়া, শোভাযাত্রা থেকে শুরু করে যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে তিনি খরচ করেছেন প্রায় ৪ লাখ রুপি। এজন্য একটি সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানও করা হয়। যেখানে প্রায় দেড় হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
প্রিয় লাকি গাড়িটিকে কবর দেওয়ার আগে গ্রামের অতিথিদের মধ্যে চার পাতার একটি আমন্ত্রণপত্র বিলি করেছিলেন। যেখানে লেখা ছিল ‘২০০৬ সাল থেকে এই গাড়িটি আমার পরিবারের একজন সদস্যের মতো ছিল। এটা আমাদের সৌভাগ্য বয়ে এনেছে, আমরা সমৃদ্ধি অর্জন করেছি, সমাজে আমাদের সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা এই গাড়িটিকে চিরতরে আমাদের স্মৃতিতে রেখে দিতে চাই এবং সেই কারণেই এই গাড়িটিকে সমাধি (কবর) দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি।’
১২ ফুটের মারুতি (ওয়াগন আর) গাড়িটিকে প্রথমে ভালো করে গাঁদা ফুলের মালা দিয়ে সাজানো হয়। গাড়িটির ছাদে বিছিয়ে দেওয়া হয় লাল গোলাপের পাপড়ি। এরপর চালক সেই গাড়িটিকে চালিয়ে প্রায় ১৫ ফুট গভীর গর্তের মধ্যে রেখে দেন। এরপর চলে পুরোহিত দেখে মন্ত্র উচ্চারণ। গাড়িটির চারপাশে এসময় অনেককে গরবা নাচ করতেও দেখা যায়। পরে সেই গাড়িটিকে সবুজ কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এরপরে মাটিচাপা দেওয়া হয়। গাড়িটির ছবি তুলে রাখতে পেশাদার চিত্রগ্রাহককেও ডেকে আনা হয়েছিল। কবর দেওয়ার সময় বহু মানুষ তাদের নিজেদের মোবাইলে সেই ছবি ধারণ করে রাখেন। অনেকে আবার সেলফিও তোলেন। ইতোমধ্যেই গাড়িটিকে কবর দেওয়ার সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
নিজের গাড়িকে এভাবে কবর দেওয়ার পেছনের ঘটনাও বিস্তারিত উল্লেখ করেন গাড়ির মালিক সঞ্জয় পোলারা। সুরাটের কনস্ট্রাকশন ব্যবসায়ী সঞ্জয়ের দাবি তার পরিবারে সুদিন ফেরাতে গাড়িটি বড় ভূমিকা রেখেছিল। তিনি বলেন, প্রায় ১২ বছর আগে আমি এই গাড়িটি কিনেছিলাম। তারপর থেকে আমাদের পরিবারে উন্নতি হতে থাকে। আমাদের ব্যবসাতেও প্রচুর সফলতা আসতে থাকে। আমাদের সামাজিক অবস্থানেরও পরিবর্তন ঘটতে থাকে। ফলে এই গাড়িটিকে বিক্রি করে দেওয়ার বদলে আমরা চেয়েছিলাম একে সমাধিস্ত করা হোক। ভাগ্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই আমাদের এই উদ্যোগ।’
পরবর্তীতে সমাধিস্থলের পাশে একটি বৃক্ষরোপণ করা হবে বলেও জানান সঞ্জয়। এর উদ্দেশ্য যাতে পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারে যে, পরিবারের ‘লাকি গাড়ি’টিকে এখানে কবর দেওয়া হয়েছে।
বিডি প্রতিনিধি/জুনাইদ