দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে নিহত ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার চেয়ারম্যান একরামুল হক একরামের তৃতীয় যানাযা শেষে তার গ্রামের বাড়ি বন্ধুয়ার দৌলতপুরের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
প্রথম জানাযা শহরের মিজান ময়দানে, দ্বিতীয় জানাযা ফুলগাজী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ও তৃতীয় জানাযা দৌলতপুরের তার বাড়ির সামনের মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দ্বিতীয় জানাযায় উপস্থিত ছিলেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন নাসিম, ফেনীর ৩টি আসনের সংসদ সদস্য শিরিন আক্তার, নিজাম উদ্দিন হাজারী ও হাজী রহিম উল্যাহ ফেনীর জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবির খোন্দকার, পুলিশ সুপার পরিতোষ ঘোষ, জেলা পরিষদের প্রশাসক আজিজ আহম্মদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান বিকমসহ সকল উপজেলার চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যা বলেন: যানাযার পূর্বে যোগাযোগমন্ত্রী মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমার মনে হয় এটি একটি ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিত খুন। এ ঘটান স্পটে যারা ছিল, যারা নেপথ্যে ছিল, সত্যকে উদঘাটন করা হবে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সত্যকে উদঘাটন করা হবে। শাক দিয়ে কেউ মাছ ঢাকার চেষ্টা করবেন না। সত্যকে উম্মোচন করে সত্যকার অর্থে যারা প্রকৃত খুনি তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
প্রধানমন্ত্রী নারায়গঞ্জের ৭ খুনের ঘটনা ও ফেনীর একরাম চেয়ারম্যানের খুনের ঘটনায় কঠোর অবস্থানে আছেন। হত্যাকারী যে দলেরই হোক এবং যেই হোক তাদের ছাড় দেয়া হবেনা। প্রকৃত দোষীরা অবশ্যই সাজা পাবে, পার পাবেনা। একেবারে শহরের হার্টে এই ধরনের ঘটনা নজির বিহিন। অনেকদিন ফেনী শান্ত ছিল। সে ফেনী আবার আগুনের লেলিহান শিখা। গান পাউডার যেখানে ব্যবহার করা হয়েছে। মধ্য যুগীয় বর্বরতার কথা শুনেছি, মনে হয় সে বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। ফেনীর মতো শহরে প্রকাশ্য দিবালোকে এই হত্যাকান্ড কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না। মনে হয় ৭১এর মতো কোন পাক হানাদার বাহিনী শহরের কোন তরুন জনপ্রতিনিধির উপর হামলা চালিয়েছে।
সাংবাদিকরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের বক্তব্যের জবাব চাইলে তিনি বলেন তারা ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় ২১ আগষ্ট যখন ২২টি হত্যাকান্ড ঘটল তখনও বলেছিল শেখ হাসিনা বেনেটি ব্যাগে করে গেনেট এনেছিল। আহসান উল্লাহ মাষ্টারকে হত্যার পর বলেছিল এটি আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীন কোন্দল। কিবরিয়া, মঞ্জুরুল ইমাম, মমতাজ হত্যাকান্ডসহ প্রতিটি হত্যাকান্ডের পর তারা বলেছে এটি আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীন কোন্দল। এটি বলা তাদের পুরনো অভ্যাস। আমরা কোন কথা বলবনা। সঠিক তদন্ত করে সত্য উদঘাটন করে আমরা প্রমান করব কারা প্রকৃত অপরাধী।
দলীয় নেতা কর্মীদের বক্তব্য: ফুলগাজীর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা জানান এটি দলীয় কোন্দল। আওয়ামী লীগের ফেনীর বড় ভাইরা একরাম ভাইকে মেরে ফেলেছে। কারা মেরেছে সবাই জানে। বললে গুলি করে আমাকে ও মেরে ফেলা হবে। দলীয় ভাবে একরাম খুন করা হয়েছে। দলীয় লোকই তাকে মেরেছে। পুলিশকে বাপ ডাকা হয়েছে। পুলিশ আসেনি। পুলিশ পালিয়ে গেছে। তারা আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে। আমার ১৫ কিলোমিটার দূর থেকে ফুলগাজী থেকে এসেছি আগুন নেভাতে অথচ ফেনীর এতো নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের তারা কেন নিভাতে পারেনি। একরাম চেয়ারম্যানের গাড়িতে আগুন লাগানোর সময় সদর হাসপাতালের সামেন ৩ গাড়ি পুলিশ ছিল। পুলিশ আসেনি। তারা ছাগলনাইয়ার দিকে ও ফুলগাজীর দিকে ভেগে গেছে। ভাইকে দিনে দুপুরে মেরে ফেলেছে। পঞ্চাশ বছরেও একরাম ভাইয়ের মতো নেতার জন্ম এই অঞ্চলে হবেনা।
যানাযার পরে যা হলো: একরামুল হক একরামের দাফন শেষে যুবলীগ ও ছাত্রীগের নেতা কর্মীরা ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম সড়কে গাছের গুড়ি ও বাঁশ ফেলে সড়ক অবরোধ করে। পরবর্তীতে বিক্ষুব্ধরা ফেনী থেকে ফুলগাজী প্রবেশে পথে বন্দুয়ার বেইলি ব্রীজের পিস প্লেট খুলে খালে ফেলে দেয় এবং সড়ক যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এসময় তারা গণ-মাধ্যমের ব্যবহারকারী একটি হাইস মাইক্রোসহ ৮-৯টি গাড়ি ভাংচুর করে।
এব্যাপারে ফেনীর পুলিশ সুপার পরিতোষ ঘোস জানান, চট্রগ্রাম থেকে সিআইডির একটি বিশেষ টিম এসেছে, তারা বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। এছাড়া রাতে ফেনী শহর থেকে ১৮ জন ও ফুলগাজী থেকে ৫জনকে আটক করা হয়েছে আটককৃতদের মধ্যে কেউ জড়িত থাকলে তাদের রেখে বাকীদের ছেড়ে দেয়া হবে। এই ছাড়া ঘটনায় ব্যবহার করা হয়েছে সন্দেহে একটি প্রাইভেট কার ও ২টি মোটর সাইকেল আটক করা হয়েছে।
একরামের স্ত্রী জানান, সাংবাদিকদের কাছে সাক্ষাত্কার দিয়ে কি লাভ হবে। আমার স্বামীকে কি ফিরে পাব। আমি কিছু বলবোনা। এদিকে একরামের বড় ভাই রেজাউল করিম জসিম ফেনী মডেল থানায় উপজেলা নির্বাচনে একরামের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রাথী মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী মিনারকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাত ৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।