বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে বিজিবি সদস্যকে গুলিতে হত্যার পর সৃষ্ট উত্তেজনার মুখে সীমান্তে শক্তি বাড়িয়েছে মিয়ানমার। স্থলসীমান্তে শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূলের অদূরে বাংলাদেশি জলসীমার কাছাকাছি তিনটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে দেশটি। মিয়ানমারের মংডুর নিকটবর্তী এলাকায় দুটি ও কিলা দং এলাকায় একটি যুদ্ধজাহাজ অবস্থান করছে । সীমান্ত পরিস্থিতি অনুসন্ধানে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির ফলে কয়েক দিন আগে বিজিবির নায়েক সুবেদার মিজানুর রহমান নিহত হন। গত শনিবার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে সব ভুল-বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে।
বাংলাদেশের পক্ষে এমন কথা বলা হলেও সীমান্তে মিয়ানমারের তৎপরতা না কমে বরং বাড়ছে।
সীমান্তের লোকজন জানাচ্ছেন, মিজানের লাশ হস্তান্তর নিয়ে নানা টালবাহানা করেছে মিয়ানমার। গত রবিবার লাশ হস্তান্তরের আগে ও পরে ৫২ নম্বর পিলারের কাছে শক্তি বৃদ্ধি করে মিয়ানমারের সীমান্ত পুলিশ। পাশাপাশি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সেনাসমাবেশও ঘটিয়েছে ওই এলাকাসহ পুরো সীমান্তে। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ স্বাভাবিক তৎপরতায় সীমাবদ্ধ রেখেছে সীমান্ত পাহারার ব্যবস্থা।
এদিকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি বিশেষ সূত্র জানিয়েছে, কক্সবাজারের টেকনাফের কাছে বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমারের জলসীমায় সে দেশের তিনটি যুদ্ধজাহাজকে টহল দিতে দেখা গেছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীও এ ব্যাপারে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশের জলসীমায় নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের নিয়মিত টহল আরো জোরদার করা হয়েছে।
সোমবার সকালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিয়ানমারের নৌবাহিনী তাদের দেশের আকিয়াব বন্দর থেকে পণ্যবাহী বাংলাদেশি ট্রলারকে বন্দর ছাড়তে দেয়নি । রবিবার সারা দিন টেকনাফ স্থলবন্দরে মিয়ানমার থেকে কোনো পণ্যবাহী ট্রলার আসেনি বলে টেকনাফ স্থলবন্দরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বাংলাদেশের অর্ধশতাধিক ট্রলার পণ্য নিয়ে এখন মিয়ানমারের আকিয়াব বন্দরে আটকা পড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। টেকনাফ স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা নুরে আলম বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে গোলাগুলির পর থেকেই টেকনাফ স্থলবন্দরে মিয়ানমার থেকে কোনো পণ্যবাহী ট্রলার আসেনি।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশনের কমান্ডার লে. কাজী হারুন উর রশিদ বলেন, ‘মিয়ানমারের জলসীমায় তাদের নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজ টহল দিচ্ছে বলে আমরা শুনেছি। আমরাও সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। এ কারণে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটে যাত্রীবাহী জাহাজ ও ট্রলারগুলোকে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর নির্দেশনা মেনে চলাচল করতে বলা হয়েছে।’ সেন্টমার্টিনের কয়েকজন স্থানীয় জেলে জানান, গত শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে দ্বীপের পূর্ব দিকে ট্রলার নিয়ে মাছ শিকারে গেলে মিয়ানমার জলসীমায় সে দেশের নৌবাহিনীর তিনটি যুদ্ধজাহাজকে অবস্থান করতে দেখেছেন তারা।