বৈশাখের বাতাস গায়ে লাগতে না লাগতেই যেন আগুন লেগে গেছে ইলিশের বাজারে। ৪০০ টাকার ইলিশের দাম একটা শূণ্য বেড়ে হয়ে গেছে ৪০০০ টাকা। আর ইলিশটি যদি একটু বেশি বড় আকারের হয় তাহলে তো কথাই নেই। এক ধাক্কায় ছয়....সাত....থেকে দশ হাজার টাকায়ও কিনে নিতে কার্পণ্য করছেন না সৌখিন ইলিশভোজীরা। সেইসঙ্গে 'পদ্মার ইলিশ' শব্দ দু'টি জুড়ে দিতে পারলে হল, আড়তে আসতে না আসতেই মাছ ঢুকে যাচ্ছে ক্রেতার থলিতে।
পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ বাঙালির দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এদিন ইলিশ মাছ না হোক, একটুকরো পাখনা হলেও যেন শান্তি। এদিন রাস্তা-ঘাটে, পার্কে, রেস্তোরায় বিক্রি হয় পান্তাভাত আর ইলিশ মাছ। শখ করে ধনী, মধ্যবিত্ত সবাই ছোটে ভাজা ইলিশের ঘ্রানে পান্তার স্বাদ নিতে। যদিও নিম্নবিত্তের মানুষেরা সারাবছর পান্তাভাতে অভ্যস্ত হলেও এদিন পান্তা থেকে হয়ত দূরেই থাকেন। কারণ এক টুকরো ইলিশের সঙ্গে একপ্লেট পান্তা ভাত জায়গাভেদে একশ' টাকা থেকে একহাজার টাকায়ও বিক্রি হয়। সেই সুযোগে ইলিশ মাছও যেন পানি থেকে আকাশে ওঠে। মাছ ব্যাপারীদের হয় পোয়াবারো। অন্য সময়ের তুলনায় ১০/১২ গুণ বেশি দামে বিক্রি হয় ইলিশ মাছ। আসছে ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ। সেই ঝাঁঝ এরই মধ্যে ইলিশ বাজারে টের পাচ্ছেন ক্রেতারা।
অবিশ্বাস্য হলেও গতকাল শনিবার মাওয়ার পদ্মা পাড়ে দুই কেজি ওজনের একটি ইলিশ মাছ বিক্রি হয়েছে ১০ হাজার টাকায়। এ ইলিশটি বিক্রি হয়েছে ছানা রঞ্জনের মৎস্য আড়তে। শনিবার ভোরে শরীয়তপুরের সুরেশ্বর এলাকার নামা পদ্মা থেকে এক জেলে দু’টি ইলিশ মাছ ছানা রঞ্জনের মৎস্য আড়তে আনেন। এ সময় মাছ দু’টি তিনি ডাকে বিক্রি করেন ১৪ হাজার টাকায়। সিরাজদিখান কাজীশাল এলাকার গয়া নামে এক পাইকার দুই কেজি ওজনের ইলিশ মাছ ১০ হাজার টাকায় ও এক কেজির কম ওজনের অপর মাছটি চার হাজার টাকায় কিনে নেন। তিনি আবার ওই মাছটি বিক্রি করবেন লাভ রেখে। সেক্ষেত্রে এটির দাম আরও কয়েক হাজার বেড়ে যাবে এমনটাই স্বাভাবিক।
জানা গেছে, বৈশাখ উপলক্ষেই ইলিশ মাছের এমন আকাশচুম্বী দাম। পয়লা বৈশাখের পান্তা ইলিশের আয়োজনকে কেন্দ্র করে ইলিশ কেনার আশায় আড়ত থেকে আড়ত চষে বেড়াচ্ছেন অনেকেই। দূর-দূরান্ত থেকে ছুটছেন মাওয়ার পদ্মা পাড়ে। এসব কিছুকে কেন্দ্র করেই পদ্মার রূপালী ইলিশের বাজারে এখন আগুনের উত্তাপ। তরতাজা একটি পদ্মার ইলিশ এখন বিক্রি হচ্ছে চার হাজার থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকায়। তবে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানো হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। কারণ, প্রতি বছর পহেলা বৈশাখের কয়েকদিন আগে ইলিশের দাম এমন বেড়ে গেলেও শেষ মুহূর্তে আবার কমতে শুরু করে। ক্ষেত্রবিশেষ দাম অস্বাভাবিক হারে কমে যায় যা গত বছর পহেলা বৈশাখের আগে হয়েছিল। এতে ধারণা করা যায় গুদামজাত ইলিশ বিক্রি না হওয়ায় ফের দাম কমাতে বাধ্য হয় ক্রেতারা।
বিডি-প্রতিদিন/০৫ এপ্রিল ২০১৫/ এস আহমেদ