বগুড়ায় ঘূর্ণিঝড়ে সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। জেলা শহরের সবখানেই লেগে আছে ঝড়ের ছাপ। মুচড়ে পড়েছে গাছপালা, ঘরের দেয়াল, সড়ক মহাসড়কে গাছ ভেঙ্গে রাস্তা চলাচল বন্ধ ছিল। প্রায় ২০ মিনিটের এই ঝড়ে জেলায় এ পর্যন্ত ১৭ জনের মুত্যু সংবাদ পাওয়া গেছে।
এছাড়া সারিয়াকান্দি উপজেলায় নৌকা ডুবে ১জন নিখোঁজ রয়েছে। দেয়াল চাপা, গাছ ভেঙ্গে পড়ে, বজ্রপাতে এ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার টিনের চালা গাছপালা, বাড়িঘর, প্রতিষ্ঠান ঙেঙ্গে পড়েছে। বিদ্যুৎ অবস্থা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। গত শনিবার সন্ধ্যায় ঝড়ের পর থেকে আজ বিকাল পর্যন্ত কোন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল হয়নি। মোবাইল ফোন নেট ওয়ার্ক রয়েছে নানা সমস্যায়। জেলা প্রশাসন এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমান এখনো নিরুপন করতে পারেনি।
ঝড় চলাকালে দেয়াল চাপা, গাছের ডাল, বজ্রপাতে ও বিদ্যুতায়িত হয়ে নিহতরা হলেন, বগুড়া শহরের বউ বাজার এলাকার আব্দুল ওয়ারেছের স্ত্রী আছিরন বিবি (৫৫), নজরুল ইসলামের মেয়ে নীলা (৩ মাস), সদরের শহরদিঘি এলাকার খাজা মিয়ার পুত্র রজব (১৫), পালশা গ্রামের আইজালের পুত্র পলাশ (১৮), চাঁনপাড়া নিশিন্দারার গোলাপী বেগম (৩৫), শাজাহানপুর উপজেলার ক্ষুদ্রফুলকোট গ্রামের লুৎফরের পুত্র আব্দুল মান্নান (৩৫), তায়েব আলীর স্ত্রী রাবেয়া (৬৫), খোয়ারপাড়া বাবলুর কন্যা পায়েল (২), সারিয়াকান্দি উপজেলার বিলপাড়া গ্রামের ইবান আলীর স্ত্রী শান্তা বেগম (৫০), ফুলবাড়ি পূর্ব পাড়ার নুর হোসেন পুত্র সুজন (৩০), চর ধারাবর্ষার খোকা মণ্ডলের ছেলে মোজাম মণ্ডল (৩৫), কাহালু উপজেলার হারলতা গ্রামের আব্দুস সাত্তারের পুত্র আজিজুল (১৯), আবেদ আলীর পুত্র ইসমাইল হোসেন (৩৮), ধুনট উপজেলায় জোড়শিমুল উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত ফয়েজ উদ্দিনের পুত্র আফজার হোসেন (৬০), সোনাতলা উপজেলার লোহাগাড়া গ্রামের মোকো প্রামানিকের স্ত্রী ফিরোজা বেওয়া (৫৫), গাবতলী উপজেলার তেলিহাটা গ্রামের আদর উদ্দিনের স্ত্রী সামিয়া (৫২) ও নন্দীগ্রাম পৌরসভার বোয়ালগ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার (৫০)। সারিয়াকান্দিতে নৌকাডুবে ১জন নিখোঁজ রয়েছে। তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। ঝড়ে আহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। তাদের মধ্যে অন্তত ৮৫জনকে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা ১ মিনিট থেকে হঠাৎ করে জেলা শহরের পশ্চিম দিক থেকে ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়। প্রায় ২০ মিনিট স্থায়ী এই ঝড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে যায়।
বগুড়া আবহাওয়া অফিস বলছে, ঘন্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি বয়ে গেছে। এই সময় জেলা শহরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় উঠতি ফসল, কাঁচাপাকা ঘরবাড়ি, টিনের চালা, গ্রীষ্মকালিন ফলের গাছ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। জেলা শহরের শাজাহানপুর উপজেলার বগুড়া টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ এর অফিস ঘর, ক্লাশ রুম আসবাবপত্র ঝড়ে তছনছ হয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রভাষক আমিনুল ইসলাম ডাবলু জানান, কম্পিউটার, কাগজপত্র, ভবনের দেয়ালসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
বগুড়া পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক পিপিএম জানান, এ পর্যন্ত ১৫ নিহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। জেলায় নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে জেলা পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে।
বগুড়ার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ত্বত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হযরত আলী জানান, বগুড়ায় এ ধরনের বিদ্যুৎ বিপর্যয় এর আগে কখনো হয়নি। বিদ্যুৎ কত সময় পর সচল করা যেতে পারে সে বিষয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না। তবে ৭২ ঘন্টার মধ্যে বিদ্যুৎ সচল করতে কাজ করে যাওয়া হচ্ছে।