ট্রেনের টিকেট কালোবাজারির সাথে রেলের কিছু সংখ্যক কর্মচারিরাও জড়িত আছেন। এমন ঘটনার দায়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনের আবদুর রহিম ও সাইফুল ইসলাম নামের দুই বুকিং সহকারিকে বরখাস্তও করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। চারটি স্টেশনের দিকে বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে।
ঈদ মৌসুমে টিকেট কালোবাজারিরা স্টেশন কেন্দ্রিক বেপরোয়া হয়ে উঠে। যাত্রীদের কাজ থেকে আদায় করে নেয় অতিরিক্ত টাকা। প্রতিটি স্টেশনে পৃথক কালোবাজারি সিন্ডিকেটের নেপথ্যে রয়েছে স্থানীয়ভাবে আরএনবির সদস্য, বুকিং সহকারি, স্থানীয় কাউন্সিলরের ভাই ও নামধারি আওয়ামী লীগ নেতার আত্বীয়-স্বজনরা। রেল কর্তা-কর্মচারি, ট্রেনের যাত্রী, গোয়েন্দা রির্পোট ও স্থানীয়দের নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ঈদে কালোবাজারি বন্ধে চারটি রেলস্টেশনে বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে আরএনবির সদস্য হাবিলদার শাহীন মৃধা, কমলাপুর স্টেশনে আজাদ, ভৈরবে স্থানীয় এক কমিশনারের ভাই শরীফ ও ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় সিএনএস কোম্পানীর অপারেটর সাইফুল ইসলাম বাবু এসব কালোবাজারি সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এতে জড়িত কালোবাজারিরা বিভিন্ন ধরণের নেশা, হেরোইন সেবন করে টিকেট না পেয়ে রেল কর্মচারিদেরও মারধর করে থাকে।
রেল শ্রমিক লীগ স্টেশন শাখার সম্পাদক কামাল পারভেজ বাদল অভিযোগ করে বলেন, প্রতিনিয়ত টিকেট কালোবাজারি হয়। এসব কালোবাজারি ঈদের মৌসুমে বেশী হয়ে থাকে। এতে চট্টগ্রাম রেলস্টেশরে আরএনবির পোস্টিং হাবিলদার শাহীন মৃধার নেতৃত্বে তাদের সদস্যদের সহযোগিতায় প্রতিদিন ‘কৌশলে’ টিকেট কালোবাজারি ও মাদক ব্যবসা চলছে। তিনি কালোবাজারি ও মাদক ব্যবসার কাজে জড়িত থেকেও রাজনৈতিক দাপট দেখিয়ে অনিয়ম ও অপকর্ম দিন দিন বেড়েই চলেছে। তিনি বলেন, মৃধাসহ আরএনবির সদস্যদের কারণে বাইরের দালালরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। তবে উর্ধতন কর্মকর্তাদের নজরদারিতে কিছুটা কালোবাজারি চট্টগ্রামে কমে আসলেও শাহীন মৃধাসহ অন্যদের কারণে ঈদের মৌসুমে ‘কৌশলে’ কালোবাজারি চলছে বলে তিনি জানান।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চীফ কর্মাশিয়াল ম্যানেজার (সিসিএম) সরদার সাহাদাত আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইদানিং কালোবাজারিরা কৌশল নিয়ে লাইনে দাড়িয়ে মহিলার মাধ্যমেও টিকেট সংগ্রহ করে। পরে বাইরে গিয়ে হয়তো উচ্চ দামে বিক্রি করে। এতে বুঝার কোন উপায় নেই। বাইরের দালালদের সাথে টিকেট কালোবাজারিতে জড়িত থাকার দায়ে ইতিমধ্যে বি.বারিয়া স্টেশনের ২ জন বুকিং সহকারিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, টিকেট কালোবাজারি বন্ধে ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ নানাবিধ বিষয়ে ঢাকা কমলাপুর স্টেশন, চট্টগ্রাম রেলষ্টেশন, কুমিল্লা, ভৈরব ও বি.বাড়িয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোতে র্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্প, স্ব স্ব বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মনিটরিং, বিভিন্ন স্টেশনে প্রতিদিন পরির্দশনসহ সিসিটিভি ক্যামেরাও বসানো হয়েছে।
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সদর কমান্ড্যান্ট মো. ইকবাল হোসেন বলেন, অতীতে টিকেট কালোবাজারি হয়েছে অনেক। এখন তেমন নেই। আরএনবির শাহীন মৃধাসহ অন্যরা জড়িত থাকার অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রেল কর্মকর্তা-কর্মচারি, ট্রেনের যাত্রী, গোয়েন্দা রির্পোট ও স্থানীয়দের নির্ভরযোগ্য সূত্রে বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে জানা যায়, ঈদের মৌসুমে দালাল চক্র, জিআরবি পুলিশ সদস্য, রেল কর্মচারি, বুকিং সহকারি ও আরএনবির সদস্যরা টিকেট কালোবাজারিতে সক্রিয় থাকে। বুকিং ক্লার্ক, আরএনবির সদস্য, জিআরপি পুলিশ, কম্পিউটার অপারেটর ও বহিরাগত দালালরা মিলেমিশে ট্রেনের টিকিট বিক্রি করছেন কালোবাজারে। এতে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারি জড়িত না থাকলেও উদ্দেশ্যমূলকভাবে জড়িয়ে দিচ্ছে এক শ্রেণির সুবিধাভোগী রেল কর্মচারিরা। যারা এসব কাজের সাথে জড়িত তারা বিভিন্ন সংস্থাকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তও করছে বলে জানান চট্টগ্রাম রেল স্টেশন মাস্টার মাহবুবুল আলম খানসহ অনেকেই।
আরো জানা গেছে, চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে ২৫ জনের একটা সিন্ডিকেট জড়িত। হেড বুকিং ক্লার্ক (এখন বদলীকৃত) বুকিং ক্লার্ক জসিম উদ্দিন, আরএনবির পোস্টিং হাবিলদার শাহীন মৃধা, নায়েক দেলোয়ার হোসেন, হাবিলদার আক্তার মাহমুদ ও মো. হাফিজ। তাদের সহযোগী বহিরাগত আল আমিন, বোরহান উদ্দিন, দেলোয়ার ওরফে হাসান, জাহাঙ্গীর ওরফে লম্বা জাহাঙ্গীর, জাহাঙ্গীর ওরফে ম্যারা জাহাঙ্গীর, ইমরান ও ফারুক হোসেন, সাবেক আনসার সদস্য জসিম উদ্দিন, শিমুল, নুরুল আমিন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২০/২৫জন, এদের মধ্যে সিএনএস কম্পিউটার অপারেটর সাইফুল ইসলাম বাবু, বুকিং সহকারি আবদুর রহিম, সাইফুল ইসলাম, দালাল চক্রের মধ্যে হাকিম, জালাল, কাল্লু, আলম, ইয়াছিন, জিআরপি ফাঁড়ির এসআই আলমগীর হোসেন, কনস্টেবল বজল, শাহ আলম, হেলাল, ধীরাজ, ভুট্টো, সোহাগ, সুমন, কাইয়ুম, বালু ও সিরাজ। এতে টিকেট কালোবাজারির দায়ে সিসিএমের নির্দেশে ইতিমধ্যে রহিম ও সাইফুল নামের দুই বুকিং সহকারিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ভৈরব স্টেশনে ৬/৭ জনের সিন্ডিকেটের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় কমিশনারের ভাই শরীফ, হুমায়ন, ইসলাম, আলিম, এক আওয়ামী লীগ নেতার ভাগিনা মিস্টু, মীম ফাস্টফুটের মালিক মতিসহ অন্যরা। এছাড়া কুমিল্লায়-৫ জন, ১৩, আখাউড়ার ৮ ও ফেনীর ৫ জন মিলে গড়ে ওঠা এ সিন্ডিকেট কালোবাজারে বিক্রি করছে ট্রেনের সিংহভাগ টিকিট।
বিডি-প্রতিদিন/১৩ জুলাই ২০১৫/ এস আহমেদ