২০০১ সালের ১ অক্টোবর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার গঠিত হয়। এর পরই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) পরিবর্তন আসে। বিসিবির ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পান সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে আমূল বদলে দেওয়া কোকোর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ফল দেশের সেরা তিন ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। এ ছাড়া শাহরিয়ার নাফিস, নাফিস ইকবাল, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মেহরাব জুনিয়র, শাহাদাত হোসেন রাজীব, এনামুল জুনিয়র, শামসুর রহমান শুভ, আরাফাত সানি, সোহরাওয়ার্দী শুভরা আরাফাত রহমান কোকোর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ফল।
২০০২ সালের ১১ আগস্ট বিসিবি পরিচালনা পরিষদের ওপর হাই কোর্টের স্থগিতাদেশ জারি হলে বিসিবিতে পরিবর্তন আসে। বোর্ড পরিচালনায় গঠিত হয় ১০ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি। বদলে যায় ক্রিকেটের চেহারা। তরুণ সংগঠকদের সামনে নিয়ে আসা হয়। একঝাঁক নতুন মুখ বদলে দেন দেশের ক্রিকেটের সাংগঠনিক চেহারা। ২০০৪ সালে ১৬ দেশ নিয়ে বিসিবি আয়োজন করে আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ; যা ছিল সে সময়ে বিসিবির জন্য বড় এক চ্যালেঞ্জ। সে চ্যালেঞ্জ বিসিবি সফলভাবে উতরে যায় আরাফাত রহমান কোকোর সুপরিকল্পনায়। তাঁর সময়ে বগুড়ায় শহীদ চান্দু ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণ করা ছিল বড় একটা চ্যালেঞ্জ। আশ্চর্য হলেও সত্য, ১৮ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার স্টেডিয়াম নির্মাণে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রাক্কলিত বরাদ্দ ছিল মাত্র ৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। দুবারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড স্টেডিয়ামের ক্রিকেট ফ্যাসিলিটিজ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। বগুড়ায় বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো হারায় শ্রীলঙ্কাকে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামকে ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রূপান্তরের আইডিয়া কোকোর। ২০০৬ সালের ৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে মিরপুর স্টেডিয়ামের আন্তর্জাতিক অভিষেক। গত দেড় দশকে ২১৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে এখানে।
বাংলাদেশে ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-২০ ক্রিকেট আয়োজনের প্রবর্তক আরাফাত রহমান কোকো। ২০০৩-০৪ মৌসুমে ক্লাবসমূহের আপত্তিতে ঢাকা প্রিমিয়ার বিভাগ ক্রিকেট যখন সংশয়াচ্ছন্ন, তখন কোকোর পরিকল্পনায় করপোরেট টি-২০ লিগ আয়োজিত হয়। তাঁর সময়ে বিসিবির কোনো কমিটিকে স্পন্সর নিয়ে ভাবতে হয়নি। কার্যক্রমে নতুনত্ব আনতে ক্রিকেট অ্যাওয়ার্ডস নাইট প্রবর্তন করেছিল বিসিবি আরাফাত রহমান কোকোর পরিকল্পনায়। বিসিবিতে চেয়ার আঁকড়ে থাকতে চাননি বলে ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত বিসিবির কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচনে অংশ নেননি। বেঁচে থাকলে আজ আরাফাত রহমান কোকোর ৫৬তম জন্মবার্ষিকী পালিত হতো উৎসবমুখরভাবে। কিন্তু নিয়তির পরিহাস, মাত্র ৪৫ বছরে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন তিনি। এ সংক্ষিপ্ত জীবনে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইমেজ প্রতিষ্ঠায় যা করেছেন আরাফাত রহমান কোকো, তা সত্যিই অবিস্মরণীয়।