আফগানিস্তানে ইন্টারনেট সেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে তালেবান প্রশাসন। সোমবার থেকে শুরু হওয়া এ ব্ল্যাকআউটে দেশটির কোটি মানুষ কার্যত বাইরের বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) আফগান গণমাধ্যমের বরাতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, তালেবান সরকারের সাম্প্রতিক এক আদেশ অনুসারে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ওই আদেশে অনলাইনে অশ্লীলতা রোধের কথা উল্লেখ ছিল।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে আফগানিস্তানে মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। স্যাটেলাইট টেলিভিশনের সম্প্রচার ব্যাহত হয়েছে। কাবুল বিমানবন্দরে অন্তত পাঁচটি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। হাসপাতাল, সরকারি ও বেসরকারি অফিসের কার্যক্রমও মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে।
তালেবান শাসনামলে এবারই প্রথমবার সারাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করা হলো। এর আগে ছোট ছোট প্রদেশে আংশিকভাবে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়েছিল। সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা সেপ্টেম্বরের শুরুতে ‘সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা’ জারি করেছিলেন।
ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন থাকায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোও কাবুলে তাদের দপ্তর ও সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। নেটওয়ার্ক নজরদারি সংস্থা ‘নেটব্লকস’ জানিয়েছে, দেশটির ইন্টারনেট সংযোগ ১৪ শতাংশে নেমে এসেছে, যা কার্যত পূর্ণাঙ্গ ব্ল্যাকআউট। ফোন সেবাও ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
তালেবানের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, অশ্লীলতা রোধ ও নৈতিকতা রক্ষার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাইরের দুনিয়ায় নিজেদের শাসনব্যবস্থার সমালোচনামূলক চিত্র আড়াল করতে এবং পশ্চিমা শক্তির নজরদারি এড়াতেই এ ব্যবস্থা।
আফগানিস্তানের সাবেক গোয়েন্দাপ্রধান আহমদ জিয়া সারাজের মতে, তালেবান নেতৃত্ব আশঙ্কা করছে তাঁদের মোবাইল ব্যবহার করে পশ্চিমা দেশগুলো সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের অবস্থান শনাক্ত করছে।
এদিকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আফগান নারীরা। স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষেধাজ্ঞার পর তাঁরা অনলাইনে বিকল্প শিক্ষার পথ খুঁজছিলেন। ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই সুযোগও হারিয়ে গেছে। আফগান পিস ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা হাবিব খান বলেছেন, ‘চার কোটি মানুষকে বিশ্বের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করে তালেবান আফগানিস্তানকে অন্ধকার গহ্বরে ঠেলে দিচ্ছে।’ সোর্স: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/আশিক