পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের কোয়েটা শহরে দেশটির আধা-সামরিক বাহিনীর সদর দপ্তরের বাইরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল হামলাকারীরা আধা-সামরিক বাহিনীর সদর দপ্তরে ঢুকে গোলাগুলির পর ওই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্যে বলেছেন, হামলাকারীরা আধা-সামরিক বাহিনীর সদরদপ্তরে ঢুকে গুলি চালাতে শুরু করে। -রয়টার্স
পরে আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্যরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুললে হামলাকারীরা আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায়। তিনি বলেন, হামলাকারীরা পিকআপ ভ্যান চালিয়ে সদরদপ্তরে প্রবেশ করেন। পরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে চার হামলাকারী নিহত হয়েছেন। প্রদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বখত কাকার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, নিহতদের মধ্যে বেসামরিক ও সেনাসদস্যরা রয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অন্তত ৩৩ জন আহত হয়েছেন। তবে নিহত সেনাদের সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী কোয়েটার অবস্থান আফগানিস্তান ও ইরানের সীমান্তবর্তী এলাকায়। দেশটির খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ ওই অঞ্চলে গওয়াদর বন্দর অবস্থিত। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশ হিসেবে ৬৫ বিলিয়ন ডলারের চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর প্রকল্পের আওতায় ওই বন্দরের নির্মাণকাজ চলছে। সম্প্রতি ওই অঞ্চলে সক্রিয় ইসলামপন্থি জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী বিভিন্ন গোষ্ঠীর হামলা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করেনি। পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান ভৌগোলিক আয়তনের দিক থেকে দেশটির বৃহত্তম প্রদেশ। একই সঙ্গে বেলুচিস্তান পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবিরল, স্বল্পোন্নত এবং দারিদ্র্যপীড়িত। যেখানে পুরো পাকিস্তানের জনগণ ২৪ কোটি, সেখানে ৩ লাখ ৪৭ হাজার ১৯০ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট বেলুচিস্তানের জনগণ মাত্র দেড় কোটি। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই স্বাধীনতার দাবিতে সংগ্রাম চলছে বেলুচিস্তানে, যাকে বিচ্ছিন্নতাবাদ বলে আখ্যায়িত করেছে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার ও সামরিক বাহিনী। পাকিস্তানের এ রাজ্যে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে নিয়মিতই সংঘাত হয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের। ইসলামাবাদের ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় সরকার এবং পাকিস্তানের একান্ত নির্ভরযোগ্য মিত্র চীন যৌথভাবে বেলুচিস্তানের খনিজ সম্পদ উত্তোলন করে। তবে বেলুচ স্বাধীনতাকামীদের অভিযোগ, বেলুচিস্তানের এ সম্পদ লুট করছে ইসলামাবাদ এবং বেইজিং। কারণ বেলুচিস্তানের কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না। অন্যদিকে ইসলামপন্থি জঙ্গিরা সরকারের পতন ঘটিয়ে সেখানে কঠোর ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ইসলামাবাদ অভিযোগ করে বলেছে, চিরবৈরী প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ওই অঞ্চলের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সহিংসতায় উসকানি দিচ্ছে। যদিও নয়াদিল্লি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।