রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাত দফা সুপারিশ তুলে ধরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা শুধু বাংলাদেশ বা মিয়ানমারের নয়, এটি একটি বৈশ্বিক মানবিক ও নিরাপত্তাজনিত সংকট। তাই আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া এর সমাধান সম্ভব নয়।
মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে বক্তব্য দেন ড. ইউনূস। সেখানে আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ, কূটনীতিক ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্দেশে তিনি এই সাত দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
ড. ইউনূসের ৭ দফা সুপারিশ:
১. মিয়ানমারের ভেতরে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা, নাগরিকত্ব স্বীকৃতি এবং মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখা।
২. বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার জীবনমান উন্নয়ন ও পুনর্বাসনে সমন্বিত বৈশ্বিক সহায়তা নিশ্চিত করা।
৩. রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শক্তিশালী কূটনৈতিক উদ্যোগ চালিয়ে যাওয়া।
৪. সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘের আরও কার্যকর ভূমিকা ও তদারকি নিশ্চিত করা।
৫. রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের আন্তর্জাতিক আদালতে জবাবদিহির আওতায় আনা।
৬. মানবপাচার, সন্ত্রাসবাদ ও অনিশ্চয়তা মোকাবিলায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানো।
৭. মিয়ানমারে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া গড়ে তুলতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
ড. ইউনূস বলেন, “রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘায়িত হলে তা শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তাই এখনই যৌথভাবে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, মানবিক কারণে বাংলাদেশ বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিলেও এই সংকটের স্থায়ী সমাধান মিয়ানমারের ভেতরে তাদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে সম্ভব নয়।
সম্মেলনে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি, জাতিসংঘ কর্মকর্তারা এবং মানবাধিকারকর্মীরা রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের মানবিক ভূমিকার প্রশংসা করেন। পাশাপাশি সংকট সমাধানে আরও দৃঢ় আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক পরিসরে ড. ইউনূসের এই সাত দফা সুপারিশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে নতুন করে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করবে এবং বৈশ্বিক মহলে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার চাপ বাড়াবে।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম