পুলিশ রিমান্ডে সিলেটে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে কিশোর সামিউল আলম রাজন হত্যার দায় স্বীকার করেছেন মুহিত আলম। পাঁচজন মিলে নির্যাতন করে হত্যার পর কিশোরের লাশ গুম করার কথাও স্বীকার করেন তিনি।
সিলেট মহানগরীর জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আখতার হোসেন জানান, সোমবার আদালতের মাধ্যমে মুহিতকে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ডে সে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
মুহিতের বরাত দিয়ে ওসি আরো জানান, রিমান্ডে মুহিত হত্যায় জড়িত পাঁচজনের নাম উল্লেখ করেছে। বাকিরা হলো- কামরুল ইসলাম, শামীম আহমদ, আলী ও ময়না।
নির্যাতন ও হত্যায় জড়িত থাকা শামীম, আলী ও ময়নার অবস্থানের বিষয়ে মুহিত তথ্য দিয়েছে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান ওসি আখতার।
আখতার হোসেন আরো জানান, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে মুহিত জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের স্থলে রাখা একটি ভ্যান গাড়িতে হাত দেওয়ায় তাকে চোর সন্দেহে আটক করে মারধর করা হয়।
লাশ গুমের সময় বুধবার মুহিতকে আটক করে পুলিশ। গতকাল সন্ধ্যায় তার স্ত্রী লিপিকে আটক করা হয়। হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা কামরুল ইসলামকে বাংলাদেশ সময় সোমবার রাতে সৌদি আরবের রাজধানী জেদ্দা থেকে প্রবাসীরা আটক করে পুলিশে দিয়েছেন।
ওসি আখতার জানান, লিপি এ হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত বিচার চান বলে জানিয়েছেন। তার স্বামী যদি এ হত্যায় জড়িত থাকে, তবে তারও শাস্তি চান লিপি।
রাজন হত্যাকাণ্ডের দুই 'প্রত্যক্ষদর্শী' আজমত উল্লাহ (৫১) ও ফিরোজ আলীকে (৬০) আটক করেছে জালালাবাদ থানা পুলিশ। নগরীর কুমারগাঁও থেকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাদেরকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রাজন হত্যার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে সোমবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে তার গ্রামের বাড়ি সিলেটের সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদেয়ালি গ্রামে বৈঠক করেছেন ২২ গ্রামের মুরব্বিরা। বৈঠক থেকে তারা মঙ্গলবার বেলা ২টায় কুমারগাঁও পয়েন্টে সমাবেশ করার ঘোষণা দেন।
উল্লেখ্য, গত বুধবার সিলেট নগরীর কুমারগাঁওয়ে রাজনকে চুরির মিথ্যা অপবাদে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়। এক পর্যায়ে রাজন মারা গেলে তার লাশ গুম করার চেষ্টাকালে পুলিশের হাতে আটক হয় মুহিত আলম। তাকে সোমবার পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এছাড়া তার স্ত্রী লিপি বেগমকেও সোমবার সন্ধ্যায় আটক করা হয়।
নিহত সামিউল আলম রাজনের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী গ্রামে। সামিউলের বাবা শেখ আজিজুর রহমান পেশায় একজন প্রাইভেটকার চালক। তার দুই ছেলের মধ্যে সামিউল বড়। অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা সামিউল সবজি বিক্রি করত।
বিডি-প্রতিদিন/১৪ জুলাই ২০১৫/ এস আহমেদ