বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানার পর এখন উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে চট্টগ্রামের কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করেছে। এতে প্রবল বাতাসে গাছ ভেঙে ও বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়ে ১৮ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করেছে।
চট্টগ্রাম, ভোলা ও পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার, চাঁদপুর, ঝালকাঠি, নোয়াখালী ও বরিশালসহ উপকলীয় জেলাগুলোতে ঝড়ে শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার পাশাপাশি ঘরবাড়ি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির খবর এসেছে।
ঝড়ো হাওয়ার দাপট শুরু হয়েছিল শনিবার ভোর রাত থেকেই; সেই সঙ্গে বৃষ্টি। বেলা দেড়টার দিকে ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রামের কাছ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করে। এরপর ঝড়ের দাপট চলে আরও কয়েক ঘণ্টা।
এরই মধ্যে চট্টগ্রামে মা-ছেলেসহ ৯ জন, ভোলার তজুমদ্দিনে ঘরচাপা পড়ে ২ জন, কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় দেয়াল চাপা পড়ে ও নৌকার ধাক্কায় ২ জন, নোয়াখালীর হাতিয়ায় ঘরের ভেতর পানি আটকে ৩ জন, পটুয়াখালীর দশমিনায় এক বৃদ্ধা এবং লক্ষ্মীপুর সদরে গাছ উপড়ে একজনের মৃত্যু হয়।
চট্টগ্রাম
ঘূর্ণিঝড়ের সময় ষোলশহরে এক পথশিশু ও সীতাকুণ্ডে মা-ছেলের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন স্থানীয় মোহাম্মদ রফিকের স্ত্রী কাজল বেগম (৪৮) ও তার ছেলে বেলাল হোসেন বাবু (১০)। এছাড়া বেলা সড়ে ১২টার দিকে পাঁচলাইশে চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্সের কাছে একটি বাসার ছাদ থেকে আসা ইঁটের আঘাতে রাকিব (১১) নামে ওই শিশু নিহত হয়।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন।
ভোলা
শুক্রবার শেষরাতের দিকে ভোলায় প্রবল ঝড়ো হাওয়া শুরু হলে তজুমদ্দিনে ঘর ও গাছ চাপা পড়ে দুজনের মৃত্যু হয় বলে জানান বাংলদেশ রেড ক্রিসেন্টের সাইক্লোন প্রিপার্ডনেস প্রোগ্রামের উপ পরিচালক মো. শাহাবুদ্দীন। তারা হলেন- চাঁদপুর ইউনিয়নের শশিগঞ্জ গ্রামের নয়নের স্ত্রী রেখা বেগম (৩৫) ও মফিজের ছেলে আকরাম (১৪)।
কক্সবাজার
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুতে কক্সবাজারে কুতুবদিয়া উপজেলায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন উপজেলার উত্তর ধুরুং এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে মো. ইকবাল (২৫), উত্তর কৈয়ার বিল এলাকার ফয়েজুর রহমানের ছেলে ফজলুল হক (৫৫)। এছাড়া, ঘূর্ণিঝড়ে ওই এলাকায় আরও ১০ জন হয়েছেন।
পটুয়াখালী
সকালে প্রবল ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে ঘর ভেঙে পড়লে পটুয়াখালী দশমিনা উপজেলার সদর ইউনিয়ন লক্ষ্মীপুর গ্রামে নয়া বিবির (৫২) মৃত্যু হয় বলে জানান দশমিনার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজহারুল ইসলাম।
লক্ষ্মীপুর
ঝড়ো হাওয়ায় গাছ উপড়ে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও একজন। উপজেলার উত্তর তোওয়ারিগঞ্জ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাজ্জাদুর হাসান জানান। নিহত আনোয়ার উল্লাহ (৫৫) ওই এলাকার বশির উল্লাহর ছেলে।
নোয়াখালী
জোয়ারের পানির তোড়ে হাতিয়ায় মা-মেয়েসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মো. মইনুদ্দিন। নিহতরা হলেন হাতিয়ার চানন্দি ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামের মিনারা বেগম (৩৫) ও ১০ বছরের মেয়ে মরিয়মনেছা এবং জাহাজমার ইউনিয়নের রিপুলা বেগম (৪৭)।
বিডি-প্রতিদিন/২১ মে, ২০১৬/মাহবুব