চার দিনের সরকারি সফরে ভারত গেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা বাসস জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে তিনি এই সফর করছেন।
বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান- মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা, তিনবাহিনীর প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইটটি দুপুরে নয়াদিল্লির পালাম এয়ারফোর্স স্টেশনে পৌঁছাবে। আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি ভারতীয় রাষ্ট্রপতি ভবনে যাবেন। প্রণব মুখার্জির বিশেষ আমন্ত্রণে রাষ্ট্রপতি ভবনেই থাকবেন শেখ হাসিনা।
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথমে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। এদিন বিকালে তিনি দিল্লির চাণক্যপুরীতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন পরিদর্শনে যাবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা জানানো হবে। বাংলাদেশ হাউসে তার সম্মানে নৈশভোজের আয়োজনও থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সফরের দ্বিতীয় দিনে শনিবার রাষ্ট্রপতি ভবনে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও উপস্থিত থাকবেন।
তারপর শেখ হাসিনা রাজঘাটে অবস্থিত গান্ধী স্মৃতি সৌধে যাবেন। সেখানে পরিদর্শন বইয়ে সই করবেন। তারপর হায়দরাবাদ হাউসে প্রথমেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্ত বৈঠকে বসবেন। তারপর শুরু হবে আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এবার প্রতিনিধি দলে সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক, মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী মোজাম্মেল হক এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর হায়দরাবাদ হাউসেই দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন চুক্তি, সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও দলিল সই হবে। তারপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথ বিবৃতি দেবেন। সেখানেই সংক্ষিপ্ত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের হিন্দি অনুবাদ হস্তান্তর করা হবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বইটির হিন্দি অনুবাদ করা হয়।
এ অনুষ্ঠানের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনাকে মধ্যাহ্নভোজে আপ্যায়িত করবেন। একই দিনে বিকাল সাড়ে ৩টায় মানেকশ সেন্টারে সম্মাননা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
মুক্তিযুদ্ধে যেসব ভারতীয় সৈন্য প্রাণ হারিয়েছেন তাদের সম্মাননা জানাতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধে ১৬৬১ জন ভারতীয় সৈন্য প্রাণ হারিয়েছেন।
তাদের মধ্যে সাতজনের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এ সম্মাননা তুলে দেবেন শেখ হাসিনা। মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দানকারী অবশিষ্ট ভারতীয় সৈন্যদের পরবর্তী সময়ে পর্যায়ক্রমে সম্মাননা দেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারের সফরে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারীর সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী।
এছাড়া হোটেল তাজ প্যালেসে বাংলাদেশ ও ভারতের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখবেন শেখ হাসিনা।
এছাড়া ভারত-বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেবে। প্রধানমন্ত্রী আজমির শরীফে গিয়ে খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহ.) মাজার জিয়ারত করবেন। আগামী সোমবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালের জানুয়ারিতে সর্বশেষ দ্বিপক্ষীয় সফর করেন। এবারের সফরকে নানা দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ