ব্যাংক খাতে ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগ এনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু সরকারি অর্থ ব্যয় করে ব্যাংকিং খাতের মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিও জানান তিনি।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার সংসদে বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব দাবি জানান।
সংসদনেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় সংসদে উপস্থিত ছিলেন। তবে অর্থমন্ত্রী সংসদে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি বেলা পৌনে ২টার দিকে সংসদে আসেন।
জাতীয় পার্টির নেতা অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, কেন আপনি ২ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকের মূলধন পুনর্গঠনের জন্য দেবেন? আগের তিন অর্থ বছরেও আপনি টাকা দিয়েছেন। সরকার তাদেরকে টাকা দিতে যাবে কেন? অর্থমন্ত্রীর এই টাকা দেওয়ার কোনও অধিকার নেই। করদাতার অর্থ দিয়ে লুটের টাকার ঘাটতি পূরণের কোনও অধিকার নেই। এজন্য তো উনাকে (অর্থমন্ত্রী) আইনের আওতায় আনতে হবে। অর্থমন্ত্রীকে এজন্য আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। উনার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল চার্জ আনা উচিত বলে আমি মনে করি।
ব্যাংকিং খাতে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে অভিযোগ করে বাবলু বলেন, এই টাকা দিয়ে বাজটের ঘাটতি পূরণ করা যেতো। খেলাপি ঋণ আদায় হলে ভ্যাট বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না। ট্যাক্স পেয়ারের ২ হাজার কোটি টাকা উনি ব্যাংকিং খাতের ঘাটতি পূরণে দিচ্ছেন। মানুষের টাকা দিয়ে লুটপাটের টাকা পূরণ করছেন? এটা কোনও নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না। এটা অনৈতিক কাজ। উনি নৈতিকতা ও আইনবিরোধী প্রস্তাব কিভাবে করেন? এ ধরনের প্রস্তাব কোনোভাবেই উনি করতে পারেন না।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকগুলোকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসা হয়েছে। এক লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে আছে। সোনালী, অগ্রণী ও বেসিকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অবস্থা দৈন্যদশা। এর মধ্যে ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। আপনি কার টাকা অবলোপন করছেন? মানুষের টাকা লুট হচ্ছে, বিদেশে পাচার হচ্ছে। এসব নিয়ে অর্থমন্ত্রীর কোনও বক্তব্য নেই। আপনার বয়স হয়ে গেছে। এখন সসম্মানে পদত্যাগ করে সম্মানের সঙ্গে বিদায় দিন। নিঃশর্ত বিদায় নিয়ে দেশের ১৬ কোটি মানুষকে মুক্তি দিন।
জাতীয় পার্টির এই নেতা আরও বলেন, লুটপাট কারা করছে? এরা কি আপনাদের চেয়ে, সরকারের চেয়ে শক্তিশালী? কেন তাদের আইনের আওতায় আনবেন না? বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দুদক নাকি তার বিরুদ্ধে কিছু পায়নি। শেয়ারবাজার লুট হয়েছে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।
এসময় তিনি এ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানান।
প্রস্তাবিত বাজেটকে 'বিচিত্র দেশের বিচিত্র মন্ত্রীর বিচিত্র বাজেট' উল্লেখ করে সাবেক জাপা মহাসচিব অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, আপনি কি উন্নয়নের মহাসড়কে নাকি দুর্যোগের মহাসড়কে আছেন সেটা বিবেচনার বিষয়। ব্যাংক হিসাবে বাড়তি আবগারি শুল্ক ভুল বার্তা দিচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এ শুল্কের নাম পরিবর্তন করবেন। তিনি বলেন, কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন রাখলেও কানা ছেলে কানাই থাকে।
চালের দাম বৃদ্ধির সমালোচনা করে বাবলু বলেন, এক বছরে মোটা চালের দাম ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। মানুষ চাল কিনতে পারছে না।
বিডি প্রতিদিন/২০ জুন, ২০১৭/ফারজানা