মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতার শিকার হয়ে কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের কাছে একটি মন্দিরের পাশে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গা হিন্দু নারী-পুরুষ ও শিশু। রোহিঙ্গা মুসলিমরা হাজারে হাজারে রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিলেও এই প্রথম রোহিঙ্গা হিন্দুদের সেখান থেকে পালিয়ে আসতে দেখা গেছে।
কুতুপালং এর মন্দিরে আশ্রয় নেওয়া কয়েকজন রোহিঙ্গা হিন্দু নারী-পুরুষ বর্ণনা করেছেন- কেন তারা সেখান থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। যে হিন্দু গ্রামটি সবচেয়ে বেশি হামলার শিকার হয়েছে সেটির নাম ফকিরাবাজার। দেনাবালার বাড়ি ছিল এই ফকিরাবাজার গ্রামে। তিনি বলেন, আমাদের গুলি করেছে। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। ভাত-পানি খেতে দেয়নি। আমরা হিন্দু মানুষ। আমাদের মেরেছে-কেটেছে। আমাদের মন্দির পুড়িয়ে দিয়েছে। সেজন্য আমরা চলে এসেছি। এক গ্রাম থেকেই আমরা ৪০০ জনের মতো এসেছি। যারা মারতে এসেছিল, তারা কালো পোশাক পরে এসেছিল। ওদের চিনি না। শুধু চোখ দেখা যাচ্ছিল।
বকুলবালা নামে আরেক শরণার্থী জানান, ফকিরাবাজার থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে চিকনছড়িতে ছিল তার বাড়ি। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন ফকিরাবাজারে। তার স্বামী মেয়েকে দেখার জন্য ফকিরাবাজার যান। সেখানে তার স্বামী, মেয়ে এবং নাতি সবাই নিহত হয়েছে। তিনি বলেন, সেখানে সব মানুষকে কেটে ফেলেছে। সেখানে আমার মেয়েকে কেটে ফেলেছে। আমার মেয়েকে দেখতে গিয়েছিল আমার স্বামী। আমার স্বামীকেও কেটে ফেলেছে। আমার নাতি ছিল। তাকেও কেটে ফেলেছে।
হামলাকারীদের চিনতে পেরেছিলেন কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে বকুলবালা বলেন, কালো কালো পোশাক পরে ওরা এসেছিল। চোখ ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না। চিনতে পারিনি। ওরা কাটছিল, মারছিল, গুলি করছিল। সবাইকে মেরে ফেলেছে। ওরা কখনও বার্মিজ ভাষায় কথা বলছিল, কখনও বাংলা বলছিল। ওদের হাতে অনেক ধারালো অস্ত্র ছিল। চিকনছড়িতে যখন ওরা এসে পৌছায়, তার আগেই আমরা পালিয়ে যাই।
শিবকুমার নামে আরেকজন জানিয়েছেন, তার মা বাবা খালা সবাইকে হামলাকারীরা মেরে ফেলেছে। তিনি বলেন, হিন্দু-মুসলমান সবাইকে মেরেছে। গুলি করেছে। ওরা কালো পোশাক পরা ছিল। আমি চিনি না। চারদিক থেকে ঘেরাও করে আমাদের মারছে। হিন্দু-মুসলমান সবাই এক সঙ্গে পালিয়ে এসেছি। খবর বিবিসি বাংলার।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার