বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, গুমের ঘটনা শুরু হয়েছিল ১৯৭২ থেকে ৭৫ সালে। গণতন্ত্রের অকাল প্রয়াণ ঘটানোর জন্যই গুমের মতো অমানবিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। গণতন্ত্র হত্যায় রাষ্ট্রের এই নিষ্ঠুর চেহারা দেখে জনগণ শোক জানাতেও ভয় পাচ্ছে। গুম একটি ভয়ঙ্কর মানবতাবিরোধী অপরাধ। গুমকে ব্যবহার করা হচ্ছে সুদূরপ্রসারী উদ্দেশ্য নিয়ে, বিরোধী দল ও মতকে নির্মূল করে রাষ্ট্র-সমাজে একমাত্রিকতা, কর্তৃত্ববাদী ও একদলীয় শাসনব্যবস্থাকে দীর্ঘস্থায়ী করাই এর মূল লক্ষ্য। মানুষের কঙ্কাল দিয়েই নিষ্ঠুর একদলীয় শাসন কায়েম হয়। এ কারণেই ভিন্নমত, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসনসহ রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিকাশকে সর্বশক্তি দিয়ে রুদ্ধ করা হয়েছে। চিরদিনের জন্য নিখোঁজ হওয়ার ভয়ে মানুষ বিদ্যমান দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যাতে প্রতিবাদী হয়ে উঠতে না পারে, সে জন্য বর্তমান সরকার গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। গুম আদিম বন্য ব্যবস্থা। এই নিষ্ঠুর কাজের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা হিংস্র প্রাণীর সঙ্গেই তুলনীয়।
৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে গুমের সংস্কৃতি চালু করেছে দাবি করে রিজভী বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ গঠন করার পর থেকে এখন পর্যন্ত সারা দেশে গুম হওয়া মানুষের সংখ্যা ১২০৯ জন। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুমের সংখ্যা ৭৮১ জন। এদের মধ্যে রয়েছেন-জনপ্রতিনিধি বিএনপির সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু, কাউন্সিলর চৌধুরী আলম, লাকসাম বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির পারভেজ, সুমন, ছাত্রনেতা জাকির, নিজামুদ্দিন মুন্না, তারিকুল ইসলাম ঝন্টু, আদনান চৌধুরী, মো. সোহেল, খালিদ হোসেন সোহেল, সম্রাট মোল্লা, মাহবুব হাসান সুজনসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শত শত নেতাকর্মী।
বিভিন্ন দেশের গুমের ইতিহাস তুলে ধরে রুহুল কবির রিজভী বলেন, মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে করুণ কাহিনী হচ্ছে গুমের কাহিনী। কোনো অপরাধই চিরদিনই শাস্তি এড়িয়ে যেতে পারে না, কোনো না কোনো দিন এর বিচার হয়। দায়ী ব্যক্তিদের বিচার না হলে সেই রাষ্ট্র ক্রমে দানব থেকে মহাদানবে পরিণত হয়ে একসময় সার্বিক ধ্বংস অনিবার্য করে তুলে ক্ষতি করে দেশ ও জনগোষ্ঠীর। যেমন-হিসেন হেব্রে প্রায় ৮ বছর আফ্রিকার চাদের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ৮ বছরে হত্যা, নির্যাতন, গুমসহ অসংখ্য অপকর্ম করেছিল, তারও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল। আর্জেন্টিনার ক্ষমতাবাদ জেনারেল রেনাল বিগনান যিনি অনেক রক্ত ঝরিয়েছেন তাকেও বিচারের মুখোমুখি হয়ে শাস্তি পেতে হয়েছে। গুয়েতেমালার হত্যা-গুমের হোতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বিচারের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন