২২ অক্টোবর, ২০১৯ ২০:১৪
আসামে দুইদিনব্যাপী বাণিজ্য সম্মেলন শুরু

ভারত চায় সড়ক যোগাযোগ, বাংলাদেশের দাবি রপ্তানি জটিলতা নিরসন

শাহ্ দিদার আলম নবেল, গোয়াহাটি (ভারত) থেকে

ভারত চায় সড়ক যোগাযোগ, বাংলাদেশের দাবি রপ্তানি জটিলতা নিরসন

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের আসামের রাজধানী গোয়াহাটিতে বসেছে দুইদিনব্যাপী ‘ভারত-বাংলাদেশ স্টেক হোল্ডারস সম্মেলন’। ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর সাথে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের লক্ষ্যেই মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে এই সম্মেলন। উদ্বোধনী দিনে বাংলাদেশের সাথে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি ও তা নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশী। অন্যদিকে, চট্রগ্রাম বন্দর ব্যবহার ও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত যান চলাচল দ্রুত চালুর বিষয়ে বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরার মুখ্য মন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। 

সকাল ১০টায় দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে শুরু হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। শুরুতেই দুই দেশের ক্রস বর্ডার ট্রেড এর সম্ভাবনা নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এর কান্ট্রি ডিরেক্টর কেনেচি ইয়াকোইয়ামা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে এসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রসংশা করেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। তিনি বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের সময় যে সকল চুক্তি হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম চট্রগ্রাম বন্দর ব্যবহার। এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশই বেশি লাভবান হবে। এ বন্দর ব্যবহারের ফলে ভারতীয় হলদিয়া বন্দরের প্রায় ৮০ শতাংশ রাজস্ব চলে যাবে বাংলাদেশে। তবে এতে ভারতেরও লাভ রয়েছে। হলদিয়া বন্দর থেকে পণ্য আনা নেয়া করতে আসামের প্রায় ১২০০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হয়। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করলে তা ৬০০ কিলোমিটারে কমে আসবে। তাই দ্রুত এই চুক্তির বাস্তবায়ন চান তিনি। সেই সাথে দুই দেশের মধ্যে বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর সাথে যান চলাচলের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানান তিনি।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী বলেন, বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য রয়েছে। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে এর মধ্যে বাংলাদেশ মাত্র ১.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করছে। এর কারণ হিসেবে মন্ত্রী বলেন, ভারতে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে অনেক জটিলতা রয়েছে। এগুলো দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এসব সমস্যা সমাধানে আন্তরিক হতে হবে ভারত ও বাংলাদেশকে। তা না হলে এ ধরনের বৈঠক কাগজে কলমেই থেকে যাবে। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সানোয়াল বলেন, বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে এই উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর উন্নয়ন সম্ভব না। আর এসব রাজ্যে বাংলাদেশও বাণিজ্যের দিক দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। দুই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তরান্বিত করতেই তিনি এই বৈঠকের আয়োজন করেছেন। তিনি আশা করেন দুই দেশই আন্তরিকতার সাথে বিষয়গুলো বিবেচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিবেন। 

উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, ভারতের সড়ক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জেনারেল (অব:) ভি কে সিং , আসামের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী চন্দ্র মোহন পাটওয়ারী, আসামের অর্থমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্ব শর্মা, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাসসহ অন্যান্যরা।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল’র আমন্ত্রণে বাংলাদেশের ৯০ সদস্যেরে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী । প্রতিনিধি দলে অন্যান্যদের মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)’র চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূইয়া, বিআরটিসি’র চেয়ারম্যান এডিশনাল সেক্রেটারি এহসান-ই এলাহী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এ এইচ এম আহসান, উপ-সচিব মো. সেলিম হোসেন, কলকাতাস্থ বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনের প্রথম সচিব (বাণিজ্য) সামছুল আরিফ, গুয়াহাটিস্থ বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনার ড. শাহ মহাম্মদ তানভীর মনছুর, ভারতের নয়াদিল্লিস্থ হাই কমিশনের অর্থনৈতিক সচিব রাশেদুল আমিন, বাণিজ্য সচিব আতিকুল হক। 

এছাড়া সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির একটি প্রতিনিধি দল সম্মেলনে অংশ নেয়। প্রতিনিধি দলের মধ্যে ছিলেন চেম্বারের সিনিয়র সহ সভাপতি চন্দন সাহা, পরিচালক এমদাদ হোসেন, এহতেশামুল হক চৌধুরী, আবদুর রহমান, আতিক হোসেন, আবদুর রহমান জামিল প্রমুখ।


বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর