শেষ হয়েছে দু'দিনব্যাপী ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্মেলন। বুধবার সম্পন্ন হওয়া সম্মেলনে বাংলাদেশের সাথে ভারতের উত্তর পূর্ব ৮টি রাজ্যের ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণে টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্তে একমত হয়েছেন দু'দেশের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
টাস্কফোর্স গঠন হলে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দু’দেশের আমদানী রপ্তানিতে বিরাজমান নানা সমস্যা দূর হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী নেতারা। এই বৈঠক থেকে গুরুত্বপূর্ণ আরো অনেক সিদ্ধান্তই কার্যকর হবে বলে মনে করছেন বানিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি।
এ মাসের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে যে সকল চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে তা দ্রুত কার্যকর করতেই কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় আসাম রাজ্য সরকার আয়োজন করে এ বাণিজ্য সম্মেলন। সম্মেলনে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের রাজনীতিবিদ, কর্মকর্তাসহ অংশ নেন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। বুধবার শেষ দিনের আলোচনা শেষে উঠে আসে নানা সমস্যা এবং সমাধানে কার্যকর উদ্যোগের সুপারিশ।
এতে ব্যবসা বাণিজ্যে গতি আনতে নতুন সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা। শেষ দিনে ৩ টি কারিগরি বৈঠক হয়। যেখানে আলোচনা হয় বাণিজ্য প্রসারে রেগুলেটরি অথরিটির ভূমিকা, দু'দেশের মধ্যে যান চলাচলের প্রতিবন্ধকতা এবং চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহারে কি কি অসুবিধা রয়েছে তা নিয়ে। বৈঠক শেষে বিকেলে দুই দেশের কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠকে বিস্তর আলোচনা হয় এসব ইস্যু নিয়ে। সেখানে তুলে ধরা হয় সমস্যা এবং সম্ভাবনাগুলো।
বিশেষ করে উত্তর পূর্ব ভারতের আটটি রাজ্যে বাণিজ্য প্রসারে এবং সড়ক ও নদী সমুদ্রবন্দর ব্যবহারে জটিলতা নিরসনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যৌথ টাস্কফোর্সের প্রস্তাবনা দেয়া হয়। যৌথ টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে দুই দেশের কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ থাকবেন।
বৈঠক শেষে ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কর্মার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ এর সভাপতি মাতলুব আহমেদ জানান, এই বৈঠক বাণিজ্য প্রসারে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে টাস্কফোর্সের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে আসাম রাজ্য সরকার। টাস্কফোর্স প্রতি ৩ মাসে একটি বৈঠক করে সমস্যাগুলো সমাধান করবে। বাকি রাজ্যগুলোর সাথেও টাস্কফোর্স গঠন করা হবে যাতে করে কোন সমস্যা র্দীঘদিন চলতে না পারে।
এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, এর আগে নানা চুক্তি হলেও তা বাস্তবায়নে ছিল ধীর গতি। এবার ভারতের কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের উপলব্দি অন্য রকম। অন্যদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি জানান, এই বৈঠক নিয়ে বাংলাদেশের প্রত্যাশা অনেক। তিনি মনে করেন এবার সঠিক স্থানে মনোনিবেশ করতে পেরেছেন এবং এর ফলাফল দ্রুতই পাওয়া যাবে।
আসাম রাজ্যের শিল্প এবং বাণিজ্যমন্ত্রী চন্দ্র মোহন পাটওয়ারী জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে টাস্কফোর্সের প্রস্তাবনা তারা মেনে নিয়েছেন। তারা ৬ মাসে বৈঠক করতে চেয়েছিলেন কিন্তু আসামের মুখ্যমন্ত্রী এতটাই গুরুত্ব দিয়েছেন যে তিনি ৬ মাস নয় ৩ মাস পর পর বৈঠক করতে চান টাস্কফোর্সের সাথে।
তিনি বলেন, দেশ ভাগের আগে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করতো আসাম। পূর্ব পাকিস্তান হওয়ার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। এবার আবার পুন:সংযোগ চান তারা। যে সকল সমস্যা আছে এই বৈঠকের পর দ্রুতই তা সমাধান হবে বলে মনে করেন তিনি।
এই বৈঠক নিয়ে অনেকটা আশাবাদি বাংলাদেশের ব্যবসায়ী নেতারাও। উত্তর পূর্ব ভারতের সাথে যাদের বেশি যোগাযোগ সেই সিলেট চেম্বার অব কমার্সের ২১ সদস্য দলের নেতৃত্ব দেন সিনিয়র সভাপতি চন্দন সাহা। সাথে ছিলেন সহ-সভাপতি তাহমিন আহমেদ, পরিচালক এমদাদ হোসেন, আতিকুর রহমান , হুমায়ুন আহমেদ, আব্দুর রহমান জামিল, মামুন কিবরিয়া সহ অন্যান্যরা।
চন্দন সাহা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলের সাথে ব্যবসা করে আসছেন তারা। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে গতি আসেনি। তারা এমন একটি বৈঠকের প্রত্যাশা করেছিলেন দীর্ঘদিন। সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। এবার তাদের দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলো সমাধান হবে বলে মনে করছেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল