স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আইনগুলো হালনাগাদে কমিশন গঠন করছে সরকার। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সরকারের ঊদ্ধর্তন পর্যায়ে রয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিবের উদ্ধৃতি দিয়ে সোমবার নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
সোমবার কমিশন সভায় উত্থাপিত স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইন-২০২০ এর খসড়া নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইসি সচিব এ তথ্য জানান। ইসির এই আইন প্রণয়নে স্থানীয় সরকার পরিষদের যে ৫টি আইন রয়েছে তার সংশোধনের প্রয়োজন পড়বে কী না এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ইসি সচিব কমিশন গঠনের প্রসঙ্গ টানেন।
দেশে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের ৫টি পৃথক আইন রয়েছে যেগুলো হলো স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইন, স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) আইন, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন।
ইসি সচিব বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের সাথে আমাদের কথা হয়েছে, তারাও তাদের আইনগুলোকে হালনাগাদ করতে একটি কমিশন গঠন করবে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সরকারের ঊবর্ধতন পর্যায়ে রয়েছে। ওই কমিশন গঠন হলে তখন হয়তো ওই কমিশনেও এই সংশোধনীর বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হবে। সেখানে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর প্রস্তাব আসবে।
এই আইন প্রণয়নে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আইনগুলিতে পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়বে না মন্তব্য করে সচিব মো. আলমগীর বলেন, এই আইনের কারণে ওই আইনগুলি সংশোধনের তেমন একটা প্রয়োজন পড়বে না। তবে, আইনটি বাংলায় করলেও একটা প্রস্তাব আছে, যে শব্দগুলি প্রচলিত রয়েছে, বাংলার পাশাপাশি সেই পরিভাষাগুলো রাখার প্রস্তাব এসেছে। যেমন যদি ধরেন মেয়র। পাশে ব্রাকেটে মেয়র শব্দটি ইংরেজিতে থাকবে। আর বাংলায় নগরপিতা বা মহানগর প্রধান ইত্যাদি যা হোক হবে।
তবে এটা কিন্তু চূড়ান্ত নয়। এখানে জাস্ট উপমা হিসেবে দেয়া হয়েছে। আল্টিমেটলি যারা সংসদে আইন করবেন তারাসহ যেসব জায়গায় যাবে সেখান থেকে যে বেস্ট সাজেশন আসবে সেটা হবে। প্রতিশব্দ হিসেবে যেহেতু ইংরেজি শব্দ থাকছে তার কারণে মূল আইন পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। পরিবর্তন না করলেও সমস্যা হবে না।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, প্রচলিত ইংরেজিগুলো হঠাৎ বাংলা করা হলে একটি কনফিউশন তৈরি হবে। কী মিন করা হচ্ছে অনেকে বুঝবেন না। সেই জন্য পুরনো ইংরেজি থাকবে। আর আইন যেহেতু একই সংসদে পাস হবে ফলে যদি মনে করা হয় ইংরেজিটা থাকবে, বাংলা করার দরকার নেই তাহলে সেটাই থাকবে।
এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইন-২০২০ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আলাদা আইন রয়েছে। ওই আইনগুলির নির্বাচনী সংক্রান্ত যে চ্যাপ্টারগুলি রয়েছে সেগুলো ৫টি আইনে আলাদা করে না রেখে ওইগুলোকে একটি আইনের মধ্যে নিয়ে আসতে একটি আইন তৈরির পরিকল্পনা কমিশন গ্রহণ করেছে। তারই পেক্ষিতে একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছিল। আজকের বৈঠকে সেটি তোলা হয়।
আলোচনা করে কিছু কিছু জায়গায় সংশোধনীর প্রস্তাব এসেছে। তার ভিত্তিতে সচিবালয়ের ওপর দায়িত্ব দেয়া হছে এটা কমিশনের মতামত অনুযায়ী সংশোধন বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত করার। আগামী সোমবার আবার কমিশন সভায় তা তোলা হবে।
ওইদিন যদি আরো মতামত আসে তারপর চূড়ান্ত হলে ওয়েবসাইটে দেয়া হবে মতামতের জন্য। রাজনৈতিক দলের নেতৃবন্দ ও স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরাও মতামত দেবেন। তারপর সকলের মতামতের ভিত্তিতে কমিশন এটি চূড়ান্ত করলে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করে থাকে তার কারণেই কমিশন এটা করছে বলে তিনি জানান।
তবে এ বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, কেবল নির্বাচন পরিচালনার জন্য ভিন্ন আইন হতে পারে না, তা সার্বজনীন হতে হবে। এতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামো, মেয়াদকাল ইত্যাদি পরিবর্তন নির্বান কমিশনের কর্তব্য নয়। বিশেষত স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পদ ও পদবী পরিবর্তন নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার নয়।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন