শিরোনাম
২৯ নভেম্বর, ২০২০ ০৩:১৫

সুস্থ মানুষের লালায় মিলল অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জিন

অনলাইন ডেস্ক

সুস্থ মানুষের লালায় মিলল অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জিন

বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ মানুষ ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট’ জীবাণুঘটিত সংক্রমণের কারণে মৃত্যুবরণ করছেন। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, এই সংখ্যা দিন দিন বাড়বে।

বিশ্বব্যাপী দ্রুত সমন্বিত পদক্ষেপ না নিলে ২০৫০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা বেড়ে কোটিতে দাঁড়াবে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা সুস্থ মানুষের মুখের লালায় এমন একটি জিনের সন্ধান পেয়েছেন, যা যক্ষ্মা চিকিৎসায় ব্যবহৃত ‘ডি-সাইক্লোসেরিন’ নামের একটি শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতাকে নষ্ট করে দিতে পারে।

‘ডি-অ্যালানিন-ডি-অ্যালানিন লাইগেজ’ নামক এই জিনটি প্রথমবারের মতো ইন্টেগ্রন জিন ক্যাসেট নামক এক ধরনের ক্ষুদ্র ভ্রাম্যমাণ জেনেটিক উপাদানের মধ্যে শনাক্ত হয়।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের দুটি আলাদা আলাদা নমুনা সেটের প্রায় সব সুস্থ স্বেচ্ছাসেবকের লালায় এই ভ্রাম্যমাণ জিনের সন্ধান পেয়েছেন লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজ, কিংস কলেজ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। এ গবেষণা সম্পর্কে বিশ্বখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা নেইচার রিসার্চ কর্তৃক প্রকাশিত ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’ জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।

জিনটির দুইটি আইসোফর্ম শনাক্ত হয়েছে, যার একটি আরেকটির তুলনায় ৪ গুণ শক্তিশালী। দাঁতের ক্ষয় রোগের জন্য দায়ী ট্রেপোনেমা ডেন্টিকোলা নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া এ জিনটি বহন করছে বলে প্রমাণ করেছেন তারা। 

জিনটির সামান্য জেনেটিক পরিবর্তন হলে এর পোষক ব্যাকটেরিয়া ভ্যানকোমাইসিন নামক আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতাকে নষ্ট করার ক্ষমতা অর্জন করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজে মাইক্রোবিয়াল ডিজিজেস বিভাগে প্রায় ৩ বছর আগে কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে ড. অ্যাডাম রবার্টস ও প্রফেসর পিটার মুলানীর তত্ত্বাবধানে এ গবেষণাটির মূল কাজ সম্পন্ন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আজিজুর রহমান। তার পিএইচডি গবেষণার অংশ হিসেবে এ গবেষণাটি প্রকল্পটি সম্পন্ন হয়। লন্ডনের কিংস কলেজের ড. খন্দকার মিরাজ রহমানের ল্যাবে গবেষণাটির একটি অংশ সম্পাদিত হয়।

জানতে চাইলে‌ ড. আজিজুর রহমান বলেন, ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স মোকাবেলা করতে হলে ব্যাকটেরিয়ার অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ক্ষমতার জন্য যে জিনগুলো দায়ী, তার উৎস খুঁজে বের করা খুব জরুরি। কারণ অধিকাংশ রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া শুরুর দিকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ছিলো না। 

অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার ও অপব্যবহারের কারণে একসময়ের অ্যান্টিবায়োটিক সংবেদনশীল ব্যাকটেরিয়া নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় জেনেটিক মিউটেশন (জিনের গঠনগত পরিবর্তন) অথবা অন্য অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার ভ্রাম্যমাণ রেজিস্ট্যান্স জিন সংগ্রহ করে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে।’

তিনি আরও বলেন, “জেনেটিক মিউটেশন বা ভ্রাম্যমাণ রেজিস্ট্যান্স জিন সংগ্রহ করে কী কী কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে একসময়ের অ্যান্টিবায়োটিক সংবেদনশীল ব্যাকটেরিয়াগুলো অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠলো তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে এবং বিজ্ঞানীরা এ সকল কৌশলকে টার্গেট করে বেশ কিছু সফল অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন। 

কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়াগুলোতে ভ্রাম্যমাণ রেজিস্ট্যান্স জিনের প্রাথমিক উৎস কি তা পরিস্কার ছিলো না। আমি আমার গবেষণায় দেখিয়েছি, সুস্থ মানুষের মুখগহ্বরে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়াও রেজিস্ট্যান্স জিনের বাহক হতে পারে। সুস্থ মানুষের লালায় যে জিনটি শনাক্ত করেছি তা ভ্রাম্যমাণ হওয়ায় সেটি খুব সহজেই যক্ষ্মাসহ অন্য রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ 

অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার উদ্ভব হওয়ার পিছনে খাদ্য উপাদানের ভূমিকা থাকতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অ্যান্টিবায়োটিক ৩ মাস ধরে গ্রহণ না করলেও প্রায় সকল স্বেচ্ছাসেবীদের লালায় এ জিনের সন্ধান পাওয়া বিস্ময়কর। আমরা মনে করছি দু’দেশের কমন খাদ্য উপাদান যেগুলোর জীবাণু প্রতিরোধী ক্ষমতা রয়েছে।
 
সে রকম উপাদানকে মোকাবেলা করার জন্য সম্ভবত মুখগহ্বরের কিছু ব্যাকটেরিয়া এ জিনটিকে কাজে লাগাচ্ছে। আমাদের গবেষণার ফল অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার উদ্ভব হওয়ার পিছনে খাদ্য উপাদানের ভূমিকা নিয়ে নতুন গবেষণার দুয়ার উন্মুক্ত করলো।

সূত্র: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর