বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের (বিপিডব্লিউএন) উদ্দেশ্যে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ‘স্কুলে স্কুলে গিয়ে মেয়েদের উৎসাহিত করতে হবে, যাতে তারা পুলিশে যোগ দিতে আগ্রহী হয়।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে ‘জেন্ডার রেসপন্সিবল পুলিশিং : অ্যান অ্যাপ্রোচ অব বাংলাদেশ পুলিশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক (বিপিডব্লিউএন)।
বাংলাদেশ পুলিশে আরও বেশি নারী পুলিশ নেওয়ার মাধ্যমে পুলিশের নারীবান্ধব সেবা প্রদানের সক্ষমতা বাড়ানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন আইজিপি।
বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী সব মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের আগে যাদের জন্ম হয়েছে তারা জানবে না, একসময় দারিদ্র্য ও ক্ষুধা ছিল এ দেশের সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। বিশ্ব মোড়লেরা বলতো যে, এমন দুর্বল অর্থনীতি নিয়ে বাংলাদেশ টিকে থাকতে পারবে না। কিন্তু স্বাধীনতার মাত্র ৫০ বছরের মধ্যে বিশ্ব মোড়লদের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে, নিজের শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে বাংলাদেশ। গত ৫০ বছরে সারা বিশ্বে মাত্র ৫ টি দেশ দরিদ্রতার অভিশাপ থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পেরেছে এবং তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এ উন্নয়নের একটি অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন এবং কর্মক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান হারে নারীর অংশগ্রহন। আর এটি সম্ভব হয়েছে বিগত দিনগুলোতে শিক্ষা খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের ফলে। এর মাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সবার জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে যে, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত স্কুলগুলোতে মেয়েদের অংশগ্রহণ ছেলেদের চেয়ে বেশি। যেটি শিক্ষিত ও কর্মক্ষম নারী গোষ্ঠী বিনির্মানে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এক সময় এ দেশে শুধু উচ্চবিত্তের জন্য শিক্ষার সুযোগ ছিল। এখন সমাজের তৃনমূল পর্যন্ত সব পরিবারের মেয়েরা শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। এর ফলে, নারীদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়ছে।’
‘বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী উদ্যোগের ফলে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ পুলিশে সর্বপ্রথম ৬ জন নারী পুলিশ সদস্য যোগদান করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশে নারী পুলিশ সদস্যের সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি। এ সংখ্যা আমাদের মোট পুলিশ জনবলের শতকরা ৭.৫ ভাগ, যা আনুপাতিক হারে জাপান পুলিশের নারী সদস্যদের সমান।
আইজিপি বলেন, ‘বিপিডব্লিউএন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের নারী সদস্যরা এই বাহিনীতে জেন্ডার মেইনস্ট্রিমিংয়ের ধারাকে অব্যাহত রেখেছে। এই বাহিনীতে কর্মরত নারী সদস্যদের পাশাপাশি সমাজে নানা শ্রেণিপেশার নারীদের জন্য তারা অনুকরণীয় হয়ে উঠেছেন। ইতোমধ্যেই, তারা নারীর উন্নয়ন ও এগিয়ে চলায় নানাবিধ কর্মসূচি পালন করেছে।’
বিপিডব্লিউএনের উদ্দেশ্যে আইজিপি আরও বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার নারী ভিকটিমদের আরও বেশি মানসম্মত ও প্রয়োজনীয় সেবা দিতে প্রচলিত সেবাদানের পাশাপাশি ভিকটিমকে মানসিক কাউন্সিলিং, ট্রমা ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক পুনর্বাসনের জন্য কাজ করতে হবে।’
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ