বাংলাদেশ সরকার এক মিনিটের জন্য বাতি নিভিয়ে ৫০ বছর আগে ঘটে যাওয়া সেই কালরাত স্মরণ করবে। এদিন রাত ৯টা থেকে ৯টা এক মিনিট পর্যন্ত সারা দেশে বাতি নিভিয়ে অন্ধকার সেই কালরাতে গণহত্যা বিষয়টি স্মরণ করা হবে।
ঠিক ৫০ বছর আগে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছিল বাংলার মানুষ। মূলত বাংলার মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা মুছে দেওয়ার জন্য ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তান।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের অভিযানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আক্রমণ চালিয়ে বহু ছাত্রকে হত্যা করে। এক রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকার রাস্তায় প্রায় ৭ হাজার বাঙালিকে হত্যা করে বলে আমেরিকান সাংবাদিক সায়মন ড্রিং তার রিপোর্টে উল্লেখ করেন। এছাড়াও ঐতিহাসিক রিপোর্টগুলোতে বলা হয়েছে, এর এক সপ্তাহের মধ্যে পাকিস্তানি বাহিনী কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষকে হত্যা করে।
ওই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা বর্ণনায় মার্কিন দূতাবাস এক রিপোর্টে উল্লেখ করেছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের একটি কক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় এক ছাত্রীকে নগ্ন অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে প্রথমে ধর্ষণ, এরপর গুলি করে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।’
তৎকালীন মার্কিন দূত আরচার ব্লাড লিখেছিলেন, ঢাকায় আমরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যদের দ্বারা আতঙ্কিত হয়েছি। তারা এখানে গণহত্যা ও সন্ত্রাস চালিয়েছে। আমি তার সাক্ষী। তিনি ২৫ মার্চ রাতের অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে অন্য আরও কয়েকটি আমেরিকান দূতাবাসে টেলিগ্রাম পাঠান। ২৭ মার্চ পাঠানো টেলিগ্রামে তিনি বলেন, পাকিস্তানি আর্মি তাদের স্থানীয় সহযোগীদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খুঁজে বের করে। এরপর তাদের হত্যা করা হয়।
বাঙালিরা ৯ মাসের টানা যুদ্ধের পরে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের এদেশে দোসরদের মাধ্যমে প্রায় ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করে। আর জামায়াতে ইসলামীর তত্ত্বাবধানে পাকিস্তানী বাহিনী আল-বদর, আল-শামস ও রাজাকার বাহিনী গঠন করে। তাদের নেতৃত্বে পাকিস্তানি বাহিনী এদেশের প্রায় আড়াই লাখ নারীদের ধর্ষণ করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার গণহত্যা দিবস স্মরণে রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট পর্যন্ত সারা দেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে। এজন্য সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবন ও স্থাপনায় কোনো আলোকসজ্জা করা যাবে না। তবে ২৬ মার্চ সন্ধ্যা থেকে আলোকসজ্জা করা যাবে। কেপিআই ও জরুরি স্থাপনাগুলো ব্ল্যাক আউটের আওতামুক্ত থাকবে।
২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের জাতীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কর্মসূচি বাস্তবায়নে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর