সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারনী এলাকার বনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণের দাবি করা হলেও ৫৩ ঘণ্টা ধরে জ্বলছে এই ম্যানগ্রোভ বনের গাছপালা ও লতাগুল্ম।

সোমবার সকাল ১১টায় লাগা আগুন মঙ্গলবার বিকালে অর্থাৎ ৩০ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণের কথা বলে বন বিভাগ ও ফায়ার সাভির্সের ৩টি ইউনিট সন্ধ্যায় সুন্দরবন ত্যাগ করে। তবে বুধবার ভোর থেকে একই স্থানে ফায়ার লাইনের মধ্যে ধোয়ার কুণ্ডলি পাকিয়ে আবারও গাছপালা ও লতাগুল্মে দাউ-দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে।

দুপুর ২টায় শরণখোলা উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার ঘটনাস্থলে থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে, সুন্দরবন বিভাগের তথ্যমতে, সুন্দরবনে ১৬ বছরে ২৮ বার আগুন লেগে পুড়ে যায় প্রায় ৮০ একর বনভূমি। ২০১৭ সালের ২৬ মে পূর্ব সুন্দরবনে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ফরেস্ট ক্যাম্পের আওতাধীন আবদুল্লাহর ছিলায় বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই আগুনে প্রায় পাঁচ একর বনভূমির ছোট গাছপালা, লতাগুল্ম পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের সহকারী উপপরিচালক মো. সরোয়ার হোসেন জানান, সোমবার সকাল ১১টায় পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ থেকে ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয় শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারনী টহল ফাঁড়ি এলাকার বনে আগুন লেগেছে। প্রথমে শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ এবং বিকালে বাগেরহাটের ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটসহ বন বিভাগ ও সুন্দরবন সুরক্ষায় ভিটিআরসি টিমের সদস্যরা পাইপ টেনেও ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি। এরপর রাতের কারণে আগুন নেভানোর পাইপ টানার কাজ বন্ধ করে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় লোকালয় থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ অন্যরা।

তিনি আরও বলেন, আগুন লাগার জায়গাটা বেশ দুর্গম বনের মধ্যে হওয়ায় এবং পানি বেশ খানিকা দূরে থাকায় আমাদের কর্মীরা পানির পাইপ টানার কাজ শেষ করে আগুন নেভানো শুরু করেছে। প্রায় পাঁচ একর এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তবে সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার বিকালে দু’দফা বৃষ্টির কারণে ছড়িয়ে পড়া আগুনের তেজ কমে আসলে আগুন প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণের পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বন বিভাগ, ফায়ার সাভির্সের ৩ ইউনিটসহ সুন্দরবন থেকে চলে আসে।

তিনি আরও বলেন, আজ সকালে ওই অগ্নিকাণ্ডের স্থানে ফায়ার লাইনের মধ্যে ধোয়ার কুণ্ডলি পাকিয়ে আবারও গাছপালা ও লতাগুল্মে দাউ-দাউ করে আগুন লাগার খবর পাই। প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের শরণখোলা ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছে। এরপর মোরেলগঞ্জ ও বাগেরহাটের ফায়ার সার্ভিসের আরও দুটি ইউনিট সুন্দরবনে আগুন নেভানোর কাজে যোগ দিয়েছে। স্থানটি দুর্গম হওয়ায় তৃতীয় দিনে এসেও আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে। আগুন যাতে বনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য কাটা হয় ফায়ার লাইন। আমরা এখনও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

তৃতীয় দিনেও শরণখোলা রেঞ্জ দাসের ভারনী এলাকার বনে আগুন জ্বলতে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা ও তদন্ত কমিটির প্রধান সহকারী বন সংরক্সক (এসিএফ) জয়নাল আবেদীন।

তিনি জানান, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ ও বাগেরহাটের ফায়ার সার্ভিসের আরও তিনটি ইউনিটসহ বন বিভাগ ও সুন্দরবন সুরক্ষায় ভিটিআরসি টিমের সদস্যরা সুন্দরবনে আগুন নেভানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন