২৮ মে, ২০২১ ১৫:২৩

টিকটকে অভিনয়ের লোভ দেখিয়ে সেই তরুণীকে ভারতে নিয়ে যান ‌হৃদয়

অনলাইন ডেস্ক

টিকটকে অভিনয়ের লোভ দেখিয়ে সেই তরুণীকে ভারতে নিয়ে যান ‌হৃদয়

হৃদয় বাবুসহ তার বন্ধুরা। ছবি- আসাম পুলিশের ফেসবুক থেকে নেওয়া

ভারতে ভাইরাল হওয়া বাংলাদেশি তরুণীকে বিবস্ত্র করে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় ৬ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে ভারতের বেঙ্গালুরু পুলিশ। গ্রেফতাররা হলেন রিফাতুল ইসলাম হৃদয় বাবু ওরফে টিকটক হৃদয়, শেখ মোহাম্মদ বাবা, সাগর ও অখিল। গ্রেফতার দুই নারীর পরিচয় প্রকাশ করেনি পুলিশ। 

বাংলাদেশে ভিডিওটি ছড়াতেই তরুণী ও নির্যাতনকারীদের পরিচয় নিয়ে সোশ্যাল সাইটে লেখালেখি শুরু হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার সেল তদন্তে নামে। হাতে আসে ওই ছয়জনের একজন টিকটক হৃদয়ের বিবরণ। সেই সূত্র ধরে ভারত সরকারের কাছে তথ্য পাঠানো হয়। এরপর বৃহস্পতিবার তাদের গ্রেফতার করে ভারতীয় পুলিশ।  

টিকটক ভিডিও করেই দিন কাটত হৃদয়ের। পিছনে চলত নারী পাচার। সেই সূত্রে বাংলাদেশ থেকে এক তরুণীকে পাচার করে ভারতে পাঠায়। বাংলাদেশি তরুণীকে ভারতের কেরালা রাজ্যে পাচার করে টিকটক হৃদয় গ্যাং। শুরু হয় দৈহিক ও মানসিক নির্যাতন। ওই তরুণীকে টিকটকে অভিনয় করার কথা বলে, প্রেমে ফুঁসলিয়ে পাচার করা হয়েছিল। 

কেরালা থেকে ওই তরুণীকে কর্নাটকের একটি পতিতাপল্লীতে পাচার করা হয়। সেখানে নির্যাতনের ভিডিও আপলোড করেই নিজেদের চিহ্নিত করেছিল হৃদয়। ভিডিও ভাইরাল হয়। 

যেভাবে শুরু

ভারতে যৌন নির্যাতনের শিকার তরুণীর বাড়ি কিশোরগঞ্জে। ২০১৪ সালে কুয়েত থাকা এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সেই বিয়ে শ্বশুরবাড়ির কেউ মেনে নেয়নি। প্রায় ৫ বছর পর পর্যন্ত বাপের বাড়ি কিশোরঞ্জেই ছিলেন। সৌদি আরবে কাজের জন্য দালাল চক্রকে টাকা দেওয়ার নাম করে ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন সেই তরুণী।

তদন্তে উঠে এসেছে ঢাকায় আসার পরেই তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ হয় টিকটক হৃদয় গ্যাংয়ের সঙ্গে। তাকে প্রেমে ফুঁসলিয়ে ভারতে নিয়ে গিয়ে পতিতাপল্লীতে বিক্রি করা হয়। এর আগে গণধর্ষণের শিকার হন ওই তরুণী।

যেভাবে শনাক্ত হলেন টিকটক হৃদয়

বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ বলেন,  ছেলেটির মা ও মামাকে ভিডিওটি দেখানো হয়। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে মা স্বীকার করেন ভিডিওতে তার ছেলে রিফাতুল ইসলাম হৃদয় রয়েছেন। স্থানীয়রাও হৃদয়কে শনাক্ত করেন। স্থানীয়ভাবে তিনি টিকটক হৃদয় নামে পরিচিত। তার বয়স ২৬ বছর। উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের কারণে চার মাস আগে তাকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে বাসার কারও সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল না বলে পুলিশকে জানান হৃদয়ের মা ও মামা।

হৃদয়ের বাসা তল্লাশি করে তার জাতীয় পরিচয়পত্র, জেএসসি পরীক্ষার এডমিট কার্ড, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও রমনা থানায় তার নামে দায়ের  একটি ডাকাতি প্রস্তুতির মামলার এজাহার ও এফআইআর কপি জব্দ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। 

ডিসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, কৌশলে হৃদয়ের মামার হোয়াটসঅ্যাপ থেকে তার ভারতীয় নম্বরে যোগাযোগ করে পুলিশ। তিনি জানান, তিন মাস আগে ভারতে গেছেন। যৌন নির্যাতনের যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সেই ঘটনা ১৫ থেকে ১৬ দিন আগের। ভিডিওর ভিকটিম বাংলাদেশি তরুণী এবং ঢাকার বাসিন্দা। বয়স ২০-২২ বছর।

ওই তরুণীর আরও পরিচয় জানতে চাওয়া হলে হৃদয় হোয়াটসঅ্যাপে ভিক্টিমের একটি ভারতীয় পরিচয়পত্র আধার কার্ড পাঠায় বলে জানান তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মো. শহিদুল্লাহ। তিনি বলেন, হৃদয় জানিয়েছে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় তার কয়েকজন বন্ধুও জড়িত ছিলেন। ভারতের কেরালায় ওই ঘটনা ঘটে। ওই তরুণীর সঙ্গে আগে থেকেই তার পরিচয় ছিল।

তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার আরও বলেন, হৃদয়ের দেওয়া তথ্যমতে তরুণীর পরিবারের সন্ধান পেয়েছি। পরিবারের সঙ্গে মেয়েটির গত দুই বছর ধরে কোনো যোগাযোগ ছিল না। মেয়েটির বাবা-মা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পরে আমরা দ্রুত মেয়েটিকে ফেরত এনে চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। 

তিনি জানান, ভারতে ধরা পড়া অভিযুক্তদের ও তরুণীকে বাংলাদেশে দ্রুত আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে আলোচনা হবে। সাহায্য নেওয়া হচ্ছে ইন্টারপোলের।

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর