মোহাম্মদ নাসিম তার বাবা মনসুর আলীর মতোই সাহসী ও নির্ভীক ছিলেন। কোনো দিন অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। তিনি ছিলেন আপসহীন নেতা। মোহাম্মদ নাসিমের পরিবারের কেউ কখনো বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। তিনি আজীবন আওয়ামী লীগ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। তার চলে যাওয়ায় জাতীয় রাজনীতিতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তার শূন্যতা কোনোভাবেই পুষিয়ে ওঠার মতো নয়। এই শূন্যতা অপূরণীয়।
মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আব্দুস সালাম হলে প্রয়াত নেতা মোহাম্মদ নাসিমের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণ সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকাস্থ সিরাজগঞ্জ সাংবাদিক সমিতি এই স্মরণ সভার আয়োজন করে।
সংগঠনের সহ-সভাপতি তৈমুর ফারুক তুষারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রনির সঞ্চলনায় স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়, সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মণ্ডল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. দিলীপ রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আশরাফ তালুকদার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের কোষাধক্ষ্য শাহেদ চৌধরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, ঢাকাস্থ সিরাজগঞ্জ সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি শাহনেওয়াজ দুলাল, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য মানিক লাল ঘোষ, শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সজিদ রাসেল প্রমুখ।
সভায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, মোহাম্মদ নাসিমের অসামান্য সাংগঠনিক দক্ষতা এবং নেতৃত্বগুণ আমাদের মুগ্ধ করেছে। বাস্তব জীবনে তিনি ছিলেন কল্যাণমুখী চিন্তার অধিকারী। সব সময় তার এলাকা সিরাজগঞ্জের উন্নয়নে চিন্তা করতেন। সময়-সুযোগ পেলেই নিজ এলাকায় ছুটে যেতেন। করোনার সময়ও আমাদের নিষেধ উপেক্ষা করে তিনি সিরাজগঞ্জে ছুটে গিয়েছেন এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন।
নানক বলেন, মোহাম্মদ নাসিমের এই অকাল চলে যাওয়ার ক্ষতি কোনোভাবেই পুষিয়ে ওঠার মতো নয়। তার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বস্ত সহযোগী হারিয়েছেন। আমরা একজন অভিভাবক হারিয়েছি।
তিনি বলেন, সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনাকালেও দেশ বড় ধরনের বাধার মুখে পড়েনি। যেখানে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত করোনার আঘাতে তছনছ হয়ে গেছে। এরপরও দেশকে পিছিয়ে নিতে বিএনপিসহ বিভিন্ন অপশক্তি নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে।
আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও পানি সম্পাদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, মোহাম্মদ নাসিম তার বাবা মনসুর আলীর মতোই সাহসী আওয়ামী লীগের জন্য নির্ভীক সৈনিক ছিলেন। কোনো দিন কারও সঙ্গে আপোস করেনি, তিনি ছিলেন আপোষহীন নেতা। মোহাম্মদ নাসিম আওয়ামী লীগ ও দেশের মানুষের কাছে থেকে চলে গেছেন, তার চলে যাওয়ায় জাতীয় রাজনীতিতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাছে তিনি ছিলে বিশস্ত নেতা। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা থাকবে, ততদিন মোহাম্মদ নাসিম আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।
মোহাম্মদ নাসিমের পরিবারের কখনও বঙ্গবন্ধুর রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি উল্লেখ্য করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, বলেন, ৭৫’এ ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারের হত্যা হওয়ার পর ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী বঙ্গবন্ধু রক্তের উপর পা রেখে অনেক বড় হতে পারতেন। কিন্তু তিনি বঙ্গবন্ধুর রক্তের সাথের বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। পিতার মতোই বিশ্বাসঘাতকতা করেনি মোহাম্মদ নাসিম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি, বঙ্গবন্ধুর রক্ত সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশে আশার পর মোহাম্মদ নাসিম তার পাশে থেকে আওয়ামী লীগকে সু-সংগঠিত করেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জননেত্রীর শেখ হাসিনার নেতৃত্ব নিয়ে কখনোই প্রশ্ন করেননি। শেখ হাসিনার প্রতি মোহাম্মদ নাসিমের অবাধ বিশ্বাস ও আস্থা ছিল।
সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় বাবার স্মৃতি স্মরণে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, বাবা সব সময়ই সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। করোনার মধ্যেও নিষেধ না শুনে সাধারণ মানুষের খোঁজ-খবর নিতে ছুটে গিয়েছেন। এরপর তিনি করোনা আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠলেও পরে আবার স্ট্রোক করেন এবং এই জটিলতায় তিনি মারা যান। জীবনের পুরোটা সময় তিনি সাধারণ মানুষের জন্য এবং দেশের জন্য কাজ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা, গণমাধ্যম কর্মীরা এবং আমাদের নিয়েই ছিল আমার বাবা মোহাম্মদ নাসিমের পরিবার। কিন্তু তিনি নিজের পরিবার থেকে সব সময় নেতাকর্মী ও গণমাধ্যমকর্মীদের মূল্যায়ন করতেন।
মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর পর আমরা সিরাজগঞ্জবাসী রাজনৈতিক অভিভাবক হারিয়েছি উল্লেখ্য করে সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না বলেন, তিনি ছিলেন দল ও দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য নিবেদিত। দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে আমৃত্যু কাজ করেছেন।
মোহাম্মদ নাসিমের করা উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ তুলে ধরে সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মন্ডল বলেন, সিরাজগঞ্জের স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট, হাসপাতালসহ সকল ক্ষেত্রে দৃষ্টন্ত রেখে গেছেন মোহাম্মদ নাসিম। মন্ত্রী পরিষদের দায়িত্ব নিয়ে সারাদেশের উন্নয়ন করেছেন। দলের পাশাপাশি সিরাজগঞ্জবাসীর জন্য ছিলেন যোগ্য প্রতিনিধি।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত