বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক মো. লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে ওঠা নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে অনুসন্ধান করতে মাঠে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর একটি টিম। গতকাল দুদকের জনসংযোগ শাখা থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়ার সমন্বয়ে টিম গঠন করা হয়েছে এবং পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে তদারককারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎসহ বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে ঢাকার বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। গতকাল সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান বাদী হয়ে দুদক, সজেকা, ঢাকা-১-এ মামলাটি করেন। দুদক কর্মকর্তারা জানান, মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম খান অবৈধ উপায়ে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৫৮ লাখ ৩৮ হাজার ৬৬৩ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ নিজ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
সূত্র জানায়, দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত তথ্যে মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম খানের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় তার নামে সম্পদ বিবরণী নোটিস জারির সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুদক ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৬(১) ধারা মোতাবেক মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম খানের নামে সম্পদ বিবরণী নোটিস জারি করে। মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম খান ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম খান তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে নিজ নামে ৩ কোটি ২২ লাখ ১৬ হাজার ৮১৫ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ ও ১ কোটি ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৫৭৯ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদসহ মোট ৪ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৩৯৪ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন এবং ২৫ লাখ টাকা দায়-দেনার ঘোষণা দেন।
উল্লিখিত সম্পদ বিবরণী যাচাই-অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র-ও তথ্য পর্যালোচনায় মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম খানের নামে ৩ কোটি ২২ লাখ ১৬ হাজার ৮১৫ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ এবং ১ কোটি ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৫৭৯ টাকা মূল্যের অস্থাবর-সম্পদসহ মোট ৪ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৩৯৪ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়। আয়কর নথিতে তার পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় পাওয়া যায় ১ কোটি ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৪১৭ টাকা। এ ক্ষেত্রে পারিবারিক ব্যয়সহ তার সর্বমোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ পাওয়া যায় ৫ কোটি ৩৪ লাখ ২৩ হাজার ৮১১ টাকা। অর্জিত সম্পদের বিপরীতে দায়-দেনার পরিমাণ পাওয়া যায় ২৫ লাখ টাকা। দায়-দেনা বাদ দিয়ে তার নিট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ কোটি ৯ লাখ ২৩ হাজার ৮১১ টাকা। অপরপক্ষে অনুসন্ধানকালে তার আয়ের উৎস পাওয়া যায় ৪ কোটি ৫০ লাখ ৮৫ হাজার ১৪৮ টাকা। এক্ষেত্রে তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ পাওয়া যায় ৫৮ লাখ ৩৮ হাজার ৬৬৩ টাকা। ফলে মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম খান অবৈধ অর্থের দ্বারা তার নামে মোট ৫৮ লাখ ৩৮ হাজার ৬৬৩ টাকা মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনপূর্বক তা দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪-এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়।