১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচনে কমিশন গঠন করে পুনঃতদন্ত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।
শনিবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির আবৃত্তি মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধু সংগ্রামী রাজনীতির কবি’ শীষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘পঁচাত্তরের প্রতিরোধ যোদ্ধা স্মৃতি সংসদ’।
এ সময় হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে সামরিক বাহিনীর যেসব কর্মকর্তা জড়িত ছিল তাদের অনেকের রায় কার্যকর হয়েছে, অনেকে বিদেশে পালিয়ে আছে। যারা মানবতার ধ্বজাধারী, তাদের ওখানে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা পালিয়ে আছে। এই লজ্জা বিশ্বের লজ্জা। মানবতার দোহাই দিয়ে তারা দণ্ডিত খুনিদের আশ্রয় দিয়েছে। তাদের উচিত বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে দিয়ে জাতিকে কলঙ্কমোচনের সুযোগ দেয়া।
তিনি আরও বলেন, যারা একাত্তরে আমাদের কাছে পরাজিত হয়েছিলে, তাদের পরিকল্পনা ছিলে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ যাতে মাথা তুলে না দাঁড়াতে পারে। বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছরে বাংলাদেশকে পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। এসব কারণে ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে তাকে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হতে হয়। এ হত্যাকাণ্ড ক্ষমতার পালাবদলের জন্য ছিল না। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ছিল একাত্তরের পরাজয়ের চরম প্রতিশোধ। নিরীহ, নিষ্পাপ শিশু রাসেলকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে শুধু দু-চারজন বিপথগামী সামরিক বাহিনীর সদস্য নয়, তাদের পেছনে আরো অনেক কুশীলব ছিল। ধীরে ধীরে এসব কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচিত হচ্ছে।
পচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে অন্য শক্তি কাজ করেছে উল্লেখ করে হানিফ বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর ইনডেমনিটি করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নাম নিষিদ্ধ করেছিলেন। কুখ্যাত রাজাকার গোলাম আজমকে পুর্নবাসন করেছিলেন, নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিলেন এবং একে একে পাকিস্তানি রাজাকারদের মন্ত্রীসভায় জায়গা দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করে দেয়াই তার লক্ষ্য ছিলে। জিয়াউর রহমান তার প্রতিটি কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রমাণ রেখে গেছেন তিনি জাতির পিতা হত্যায় জড়িত ছিলেন।
কারো দয়ায় বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হয়নি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, এর পেছনে দীর্ঘ প্রেক্ষাপট ছিল। কোনো মেজরের হুইসেলে, গোলটেবিল আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়নি। আমরা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে দেশ স্বাধীন করেছি। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, '৬৬ সালের ছয় দফার ঘোষণার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার সোপান রচিত হয়েছিল। স্বাধীনতার জন্য জাতির পিতার আন্দোলনের পথ মসৃণ ছিল না। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। তাকে বারবার কারাবরণ করতে হয়েছে। ভয়ভীতি দেখিয়েও দমাতে পারেনি। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দিয়ে দমিয়ে দিতে চেয়েছে কিন্তু বাঙালি জেগে উঠেছিল বলে তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল পাকিস্তানিরা।
তিনি বলেন, আমরা বারবার দাবি করেছি পলাতক খুনিদের বিদেশ থেকে নিয়ে এসে রায় কার্যকর করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে। এই আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিষয়ে যে বিষয়টি সামনে আসে নাই সেটা অবশ্যই বলতে হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কুশীলব কে ছিলেন? কুশীলব ছিলেন খুনি জিয়াউর রহমান। আমাদের প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে। খুনি জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে জাতিকে বিভক্ত করেছেন। পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে স্বাধীনতা বিরোধীদের পুনর্বাসন করে তিনি জাতিকে বিভক্ত করে দিয়েছেন। আজকে জাতি দুই ভাগে বিভক্ত, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ও স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি। একদিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি। অন্যদিকে যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে না, পাকিস্তানের আদর্শে বিশ্বাসী তারা বিএনপি-জামায়াত প্লাটফর্মে রয়েছে।
মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্য দিয়ে জাতিকে বিভক্ত করা হয়েছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার হয়েছে। অতি দ্রুত বাকিদেরও রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা হবে।
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কবি অসীম সাহা, সাবেক রাষ্ট্রদূত মমতাজ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার, অভিনয় শিল্পী গাজী রাকায়েত, অভিনয় শিল্পী ও মহিলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক রোকেয়া প্রাচী ও সোনাগাজী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন প্রমুখ।
এর আগে সহিদ রাহমান রচিত মহামানবের গল্প অবলম্বনে নির্মিত কাহিনিচিত্র ‘আমি মায়ের কাছে যাবো’ ও ‘একজন কফিলুদ্দিন’ এর প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হয়।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন