বাংলাদেশের মহান ৫১তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে কূটনীতিকদের সৌজন্যে নয়াদিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন এক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে শুরু হয় অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন। দূতাবাসের হাই কমিশনার মোহাম্মদ ইমরান এবং হাই কমিশনারের সহধর্মিনী জাকারিয়া হাসনাত ইমরান আমন্ত্রিত অতিথিদের স্বাগত জানান।
নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দূতাবাসের হাই কমিশনার, রাষ্ট্রদূতসহ দেড় শতাধিক কূটনীতিক অনুষ্ঠানে উপস্তিত ছিলেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে একাধিক সাংসদ, রাজনীতিবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিএসএফ এর মহাপরিচালক, সিনিয়র সাংবাদিকবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী, লেখক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
কেক কাটার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা শুরু হয়। এ সময়ে আগত অতিথিরা করতালির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা উৎসবকে প্রাণবন্ত করে তোলেন।
অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ভারতের বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ড. রাজ কুমার রঞ্জন সিং। বিশেষ অতিথি ছিলেন একই মন্ত্রণালয়ের অপর প্রতিমন্ত্রী মিনাক্ষী লেখি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদেশ প্রতিমন্ত্রী শ্রী রাজ কুমার সিং বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারত বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে প্রাণের সম্পর্ক গড়ে তোলে। স্বাধীনতার ৫১ বছরে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন এক সোনালি অধ্যায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেবল বাংলাদেশরই মহানায়ক ছিলেন না, তিনি ভারতের মানুষের কাছেও মহানায়ক হিসেবে শ্রদ্ধেয়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারতের বর্তমান সরকার এবং বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিকতায় দুই দেশের মানুষে মানুষে সম্পর্ক এখন এক অনন্য উচ্চতায়। দুই দেশের বন্ধুত্ব এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাবো।
৫১ বছরের বন্ধুত্ব সম্পর্ক বর্তমান সময়কে সোনালি অধ্যায় বলে অভিহিত করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বাংলাদেশ হলো ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সমৃদ্ধির দ্বার। পারস্পরিক বন্ধুত্বের মধ্য দিয়েই আমরা দুই দেশের দ্বি-পাক্ষিক ইস্যুতেও কাজ করে যাচ্ছি।
হাই কমিশনার মোহাম্মদ ইমরান ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের তৎকালীন সরকার এবং ভারতের মানুষের ঐতিহাসিক ভূমিকার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, সেদিন ভারত আমাদের পাশে না দাঁড়ালে মাত্র ৯ মাসে হয়তো আমাদের স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হতো না।
তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার দুই দেশের বন্ধুত্বকে আরো সুদৃঢ় করেছেন। তিনি বলেন, ঐতিহাসিক কারণেই ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক দুই দেশের মানুষের কাছে একটি সোনালি অধ্যায়।
মোহাম্মদ ইমরান বলেন, বঙ্গবন্ধুর মতো দূরদর্শী ও মহান নেতার কারণেই বাঙালি জাতি তাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছিলো। স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে ৩ বছরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি যুদ্ধবিধ্বস্থ দেশ ও জাতি পুনর্গঠনে নেতৃত্ব দেন। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনা আজ বিশ্ববাসীর কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক অনিষ্পন্ন ইস্যুগুলোর সমাধানে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং দুই দেশের মানুষে মানুষে সম্পর্ক ও বন্ধুত্বের বন্ধন আরো সুদৃঢ় হচ্ছে।
অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দলের বাদ্যযন্ত্রের সুরের মূর্ছনায় দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। পরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রায় ৬ শত অতিথিদের নৈশভোজ ও বাংলাদেশ থেকে আগত সাংস্কৃতিকদলের পরিবেশনায় এক মনোজ্ঞ সঙ্গীতানুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠান উপলক্ষে হাই কমিশনারের বাসভবনসহ দূতাবাস প্রাঙ্গন বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল