নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, বাংলাদেশ আজ এক ভয়াবহ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা, গুলি করে হত্যা, নৃশংস হামলা, গণ হারে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে সরকার দেশকে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ইতিমধ্যে দখলদার সরকারের বিরুদ্ধে সমগ্র দেশের মানুষ জেগে উঠেছে।
আজ গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মান্না বলেন, অবৈধ ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য বর্তমান সরকার নৃশংসতার সব সীমা অতিক্রম করেছে। পুলিশ এবং দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে তারা বিরোধী দলের নিরীহ নেতাকর্মীদের উপর সশস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর সমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর নৃশংস হামলা চালিয়ে সরকার ভয়াবহ, ভীতিকর ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। হামলায় মকবুল হোসেন নামে একজন কর্মী নিহত এবং কয়েক'শ আহত হয়েছেন। ৫ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গণসংহতি আন্দোলন ঢাকা মহানগর উত্তরের হাতিরঝিল থানার ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংগঠক হাসু মিয়াকে কাল মধ্যরাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কর্মীদের গণহারে গ্রেফতারের পাশাপাশি তারা শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গত কয়েকদিনে সিদ্ধিরগঞ্জে নাগরিক ঐক্য এবং গণ অধিকার পরিষদের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এটি সরকারের চূড়ান্ত ফ্যাসিবাদী আচরণের বহিঃপ্রকাশ। অবৈধ ক্ষমতা হারানোর ভয়ে দিশেহারা হয়ে সরকার গণ আন্দোলন দমনের জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করছে। গুলি করে মানুষ মেরে কোন স্বৈরাচার টিকতে পারেনি। ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে; হত্যা, হামলা, গ্রেফতার করে তা ঠেকানো যাবে না।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি ইতোমধ্যে ৯টি শান্তিপূর্ণ বিভাগীয় সমাবেশ করেছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেই সমাবেশ গুলোতে অংশ নিয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী রাজনৈতিক দলের যে কোনো কর্মসূচি এখন কোন একটি দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। একারণে গণ অভ্যূত্থানের ভয়ে বিএনপির আগামী ১০ ডিসেম্বরের ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ বানচাল করার লক্ষ্যে সরকার পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রকামী মানুষের উপর হামলা করেছে, নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। নেতাকর্মীদের গণ গ্রেফতার, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় লুট, সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকদের বাধা দিয়ে এক নারকীয় পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। আমরা গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করছি। উস্কানিমূলক আচরণের মধ্যে দিয়ে সরকার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে সরকারকে নিতে হবে।
মান্না বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চ জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে। ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের যেকোন প্রতিরোধ আন্দোলনে গণতন্ত্র মঞ্চ সবসময় তাদের সমর্থন জানিয়েছে। সকল বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির যুগপৎ লড়াইয়ের মাধ্যমেই অবৈধ ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। আমরা আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি। আগামীতে দখলদার, খুনি, ভোট ডাকাত সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির সাথে যুগপৎ বৃহত্তর গণ আন্দোলন গড়ে তুলবে গণতন্ত্র মঞ্চ।
বিগত ১৪ বছরের ভোট ডাকাতি, দুঃশাসন, দুর্নীতি, লুটপাটের মাধ্যমে অবৈধ ক্ষমতাসীন সরকার দেশের গণতন্ত্র এবং অর্থনীতিকে পুরোপুরি ধ্বংস করেছে। তারা বিরোধী দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ জনগণের উপর হামলা করে দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ধাবিত করছে। দেশকে বাঁচাতে, দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে, দেশের মানুষকে বাঁচাতে এখনই জনগণকে সাথে নিয়ে দলমত নির্বিশেষে সকল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক শক্তিকে এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। গণতন্ত্র মঞ্চ মনে করে সরকারের বিরুদ্ধে সর্বব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলার এখনই সময়। আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে আমরা দেশবাসীর প্রতি সেই আহবান জানাই। গণতন্ত্র মঞ্চ অন্যান্য প্রগতিশীল, দেশপ্রেমিক, গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল এবং জনগণকে সাথে নিয়ে সেই লড়াই সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিবে।
সংবাদ সম্মেলনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকসহ গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন