জন্ম থেকেই চোখে দেখতে পায় না ১৫ বছরের কিশোর জোবায়ের আহমেদ। কিন্তু এর পরও দমে যায়নি সে। দীর্ঘ আড়াই বছরের চেষ্টায় হাফেজ হয়েছে পবিত্র কুরআনের। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হাফেজ জোবায়ের তার মধুর কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করলে সকলেই মুগ্ধ হয়ে পড়েন।
শনিবার ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে জাতীয় হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা ‘কুরআনের নূর পাওয়ারড বাই বসুন্ধরা’ কুমিল্লা জোনের প্রাথমিক বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতা ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির আয়োজনে শুরু হয় এই প্রতিযোগিতা।
আজ দিনভর চলছে কুমিল্লা জোনের প্রাথমিক বাছাই পর্ব। কুমিল্লা নগরীর বাদুড়তলা এলাকায় অবস্থিত নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শনিবার সকাল ৭টা থেকে কুমিল্লা জোনের প্রাথমিক বাছাই পর্বের কার্যক্রম শুরু হয়। সেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি মাদরাসা থেকে অংশ নেয় হাফেজ জোবায়ের। এরই মধ্যে ছয় শতাধিক হাফেজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজের জায়গা করে নিয়েছে শেষ ৩০-এ।
আজ সকাল ৭টা থেকে দুপুর পর্যন্ত ছয় শতাধিক প্রতিযোগী রেজিস্ট্রেশন করে ছয়টি পৃথক বুথে বিচারকদের সামনে পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়। প্রথম ধাপে বিচারকদের সামনে তিলাওয়াত করে দ্বিতীয় ধাপের জন্য উত্তীর্ণ হয়েছে জোবায়েরসহ ৩০ জন। তাদের মধ্যে তিনজন যাবে ঢাকায়। এখন ঢাকায় যেতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হচ্ছে তাদের।
হাফেজ জোবায়ের আহমেদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের সোহেলপুর ছাতিয়ান সিরাজুল উলুম মাদরাসার শিক্ষার্থী। তার বাড়ি পাশের হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার সমজদীপুর গ্রামে। তার বাবা মাওলানা ফারুক আহমেদ একটি মসজিদের ইমাম। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে জোবায়ের সবার বড়।
জোবায়ের আহমেদ বলে, ‘আমি অনেক বড় আলেম হতে চাই। আমার বাবা তার স্বল্প আয় দিয়ে আমাদেরকে মানুষ করতে চান। আমি বড় হয়ে বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, চোখে দেখতে না পারলেও তিনি আমাকে পবিত্র কুরআনে কারিম হেফজ করার তৌফিক দান করেছেন।’
প্রতিযোগিতা সম্পর্কে সে বলে, ‘আমাদের জন্য এমন একটি আয়োজন সত্যিই আনন্দের। এ রকম বড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পেরে ভালো লাগছে। আমি আনন্দিত শেষ ৩০-এ আসতে পেরে। বাকিটা কী হবে জানি না। তবে আমি চাই একদিন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করব। আমি সকলের দোয়া চাই।’
প্রতিযোগিতার কুমিল্লা জোনের সমন্বয়ক হাফেজ ক্বারি মোহাম্মদ মুবারক হোসেন জানান, কুমিল্লা জোনের বাছাই পর্বে অংশগ্রহণ করছে কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী-এই ছয় জেলার প্রতিযোগীরা। শনিবার ভোর থেকেই দলে দলে কুরআনের পাখিরা আসতে শুরু করে অনুষ্ঠানস্থলে। আসন্ন রমজান মাসকে সামনে রেখে দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের পৃষ্টপোষকতায় হাফেজদের এ বৃহৎ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটি।
তিনি আরো জানান, কুমিল্লা জোনের অডিশনে মোট ছয়টি বুথে রেজিস্ট্রেশন করেছে ছয় শতাধিক প্রতিযোগী। সেখান থেকে প্রথম ধাপে উত্তীর্ণ ৩০ জনকে বাছাই করা হয়েছে দ্বিতীয় ধাপের জন্য। আজ বাদ আসর শুরু হওয়া দ্বিতীয় পর্বে ৩০ জন থেকে ১০ জনকে বাছাই করা হবে। এরপর সেই ১০ জন থেকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে বিজয়ী তিনজনকে ঢাকায় নেওয়া হবে।
ঢাকা বিভাগের উত্তর-দক্ষিণ দুটি জোনসহ পুরো দেশের মোট ১১ জোন (অঞ্চল) থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী ৩০ পারা কুরআনের হাফেজরা প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। ১১ জোনের মধ্যে শনিবার কুমিল্লা জোনের অডিশন চলছে। এর আগে সিলেট ও ময়মনসিংহে অডিশনের মাধ্যমে শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিকতা। দেশের ৯টি জোন থেকে সেরা তিনজন করে মোট ২৭ জন হাফেজ দ্বিতীয় রাউন্ডে যোগ দেবে। এই তিনজনকে অভিভাবকসহ ঢাকায় আনা হবে। আর ঢাকা বিভাগের দুই জোন থেকে ৯ জন করে মোট ১৮ জন হাফেজ দ্বিতীয় রাউন্ডে অংশ নেবে।
পরে মোট ৪৫ জন প্রতিযোগী নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে বিশুদ্ধ ও সুন্দর কুরআন তিলাওয়াতের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতা। দেশবরেণ্য ইসলামিক স্কলার ও অভিজ্ঞ হাফেজদের সমন্বয়ে গঠিত বিচারক প্যানেল এখান থেকে ফাইনাল রাউন্ডের জন্য পাঁচজন হাফেজকে বাছাই করবে।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত