বৃহস্পতিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বিএনপিকে পরিকল্পনামাফিক আন্দোলন গড়ার পরামর্শ পেশাজীবী নেতাদের

৮ অক্টোবর বড় পরিসরে বৈঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত হবে না বলে পেশাজীবী নেতারা বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে চুপচুপ না থেকে পরিকল্পনামাফিক নিরপেক্ষ সরকার দাবিতে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলারও পরামর্শ দেন এসব নেতা। গতকাল রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে পেশাজীবী নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন দলের নীতিনির্ধারকরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টার এ রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকের মূল মঞ্চে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিরপেক্ষ সরকার দাবি আদায়ে রূপরেখা ঠিক করতে ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে সাত দিবসে বিএনপির নির্বাহী কমিটি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির হাইকমান্ড। সর্বশেষ গত সোমবার আইনজীবীদের সঙ্গে তারা বৈঠক করেছেন।

পেশাজীবী নেতাদের মধ্যে ছিলেন- ব্যবসায়ী নেতা ও এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, আইনজীবী নেতা জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, আসাদুজ্জামান, চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আবদুল কুদ্দুস, ফরহাদ হালিম ডোনার, হারুন আল রশিদ, আবদুস সালাম, সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, এম আবদুল্লাহ, কাদের গনি চৌধুরী, ইলিয়াস খান, শহিদুল ইসলাম, শিক্ষক অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম, লুৎফুর রহমান, মোর্শেদ হাসান খান, ড. শামসুল আলম সেলিম, ড. নাজমুল মনসুর, এমতাজ হোসেন, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, হাসিন আহমেদ, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সেলিম ভুঁইয়া, জাকির হোসেন, নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মোসাম্মৎ জাহানারা খাতুন ও শাহানারা বেগমসহ বিভিন্ন পেশাজীবী নেতারা।

গতকালের বৈঠকে ২২টি পেশাজীবী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। তাদের মধ্যে ২৫ জন নেতা বক্তব্য রাখেন। একাধিক নেতা জানান, আগামী ৮ অক্টোবর বড় পরিসরে আরেকটি বৈঠক হবে। সেখানে প্রতিটি পেশাজীবী সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট পেশার মানুষেরা অংশ নেবেন। ওই বৈঠক কীভাবে সফল করা যায় সে ব্যাপারে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এ ছাড়াও মতবিনিময় সভায় অধিকাংশ পেশাজীবী নেতা গঠনতন্ত্র মোতাবেক একটি শক্তিশালী ও সম্মিলিত পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ গঠন করতে পেশাজীবীদের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বৈঠক সূত্র জানায়, শওকত মাহমুদ বলেছেন, আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে আন্দোলনে শরিক হতে হবে। দেশে গণতন্ত্র, সুশাসন, ভোটাধিকার না থাকলে কেউ নিরাপদ থাকব না। ইলিয়াস খান বলেন, দেশে গণতন্ত্র না থাকার কারণে লক্ষ-কোটি মানুষ নানা সমস্যায় আছে। বিএনপি নেতা-কর্মীরা এলাকায় থাকতে না পেরে ঢাকায় এসে পাঠাও, উবারের গাড়িসহ হোটেলে বয়ের কাজও করছেন, মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ অবস্থায় গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। অতীতে সব বিজয়ের সঙ্গে পেশাজীবীদের সম্পৃক্ততা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

সূত্র জানায়, বৈঠকে পেশাজীবী নেতারা বলেন, ১/১১-র সময় তৎকালীন সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ বিএনপির প্রায় সব সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করেছিল। ফলে বিএনপির নেতৃত্বের শূন্যতার কারণে সেই ওয়ান-ইলেভেনের দুঃসময়ে রাজপথে ফখরুদ্দীন-মঈন গংদের বিরুদ্ধে আন্দোলন ফলপ্রসূ হয়নি। তাই অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পেশাজীবী সংগঠনকে আরও শক্তিশালী হিসেবে পুনর্গঠন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিএনপিসহ সব অঙ্গসংগঠন থেকে দু-একজন নেতা পেশাজীবী সংগঠনে রাখা যেতে পারে।

এক নেতা বলেন, অনেকে পদ না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, বিএনপি আমাকে কিছুই দিল না। এ মনোভাব পরিত্যাগ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিএনপির সমর্থনেই আমরা আজ এ পর্যায়ে এসেছি। ওই নেতা আরও বলেন, দেশে আজ দুঃসময়। বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী আজ ঢাকায় রাইড শেয়ারিং চালাচ্ছে। দেশের মানুষও ভালো নেই। তাই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে সেই আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। শুধু সমর্থন আর বিবৃতি দিয়ে হবে না। প্রয়োজনে রাজপথে নামতে হবে।

সর্বশেষ খবর