শুক্রবার, ৩ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
রাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট

ছয় শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছয় শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ করেছেন একই বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী ফাতিন নাওয়াল আল বারী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর দফতরে গতকাল এই অভিযোগ করেন তিনি।

অভিযুক্ত ছয় শিক্ষার্থী হলেন- ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী আতিফা হক শেফা, আতিকুর রহমান, তাজনোভা থিমী, মেহেদী হাসান, শাহবাজ আহমেদ তন্ময় ও আকাশ মাহবুব। এদের মধ্যে শেফা, আতিকুর রহমান ও থিমী ছাত্রলীগের পদে আছেন।

প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, র‌্যাগিংয়ের একটি অভিযোগপত্র পেয়েছি। বিষয়টি বিভাগের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে রাবির বঙ্গমাতা হলে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে সমাজকর্ম ও সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় ছাত্র উপদেষ্টাকে তিন ঘণ্টা হলে অবরুদ্ধ করে আন্দোলনের ঘটনাও ঘটে। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী ফাতিন নাওয়াল আল বারী তার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন- কিছুদিন ধরে ইনস্টিটিউটের কয়েক বড় ভাইবোনের কাছে তিনি ক্রমাগত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন। ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি ইনস্টিটিউটের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক জুনিয়রের সঙ্গে ক্যাম্পাসের বাইরে রেস্তোরাঁয় খেতে যান। সেখানে ইনস্টিটিউটের সিনিয়রদের (অভিযুক্তদের) সঙ্গে দেখা হয়।

তারা সেখানে নানাবিধ অশালীন কথাবার্তা ও অপ্রত্যাশিত অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে থাকেন। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এ নিয়ে পরবর্তীতে অভিযুক্তরা আরও নানাভাবে তাকে মানসিকভাবে হেনস্তা করেন। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তাকে ডেকে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করেন অভিযুক্তরা।

ফাতিন নাওয়াল আল বারী তার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন- তার সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া মেয়েকে সিনিয়রকে দিয়ে ধর্ষণের হুমকি দেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী শেফা। অভিযোগকারী নিজের নিরাপত্তা চেয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, এটা খুবই তুচ্ছ ঘটনা। সে আমাদের খুব কাছের ছোট ভাই। বিষয়টা বিভাগের স্যারদের জানানো হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখছেন। আরেক অভিযুক্ত শেফাকে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।

এই ব্যাপারে ইনস্টিউটের পরিচালক অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, এ ঘটনায় বিভাগে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা অভ্যন্তরীণভাবে বিষয়টা দেখছেন।

এদিকে রাবি বঙ্গমাতা হলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় ছাত্র উপদেষ্টাকে তিন ঘণ্টা হলে অবরুদ্ধ করে আন্দোলনের ঘটনাও ঘটে। এই নিয়ে আলোচনায় বসেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আলোচনা শেষে যে কোনো ঘটনায় কঠোর অবস্থানের কথা জানানো হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বঙ্গমাতা হলে পানি গরম করা পাতিল নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ান সমাজকর্ম বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের ছাত্রী কাজী সুমাইয়া ও সংগীত বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের ছাত্রী নুরুন্নাহার দোলন। সিনিয়রকে তুইতোকারি করার অভিযোগ তোলে দোলন। অন্যদিকে এই ঘটনায় কয়েক দিন ধরে মানসিক নির্যাতনের পাল্টা অভিযোগ তোলে সুমাইয়া। বুধবার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দুপুরে বিষয়টি মীমাংসা করতে হলে যান ছাত্র উপদেষ্টা। তখন সংগীত বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শাইলা তাসনিমের সঙ্গে তর্কে জড়ান ছাত্র উপদেষ্টা। উভয়ের মধ্যে উচ্চবাচ্যও হয়। এ ঘটনায় শিক্ষকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগে ছাত্র উপদেষ্টাকে অবরুদ্ধ করেন সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা। হল গেটে আন্দোলন শুরু করেন তারা। দুই ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যদ্বয় ও প্রক্টরিয়াল টিম গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে ছাত্র উপদেষ্টাকে উদ্ধার করেন। সন্ধ্যায় প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ ও বৈরী আচরণের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। অবশেষে শিক্ষার্থীদের সামনে অনুতপ্ত হন ছাত্র উপদেষ্টা।

হলের এই ঘটনায় গতকাল আলোচনায় বসেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আলোচনা শেষে সন্ধ্যায় জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে জানান, আবাসিক হলের বিষয়গুলো ভবিষ্যতে যেন বৃহৎ আকার ধারণ না করে, সেজন্য হল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

সর্বশেষ খবর