অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম যে, বিষয়টি নিয়ে লিখব। কিন্তু বিষয়বস্তুটির গভীরতা এত বেশি যে এই অবোধ বান্দা জ্ঞানের রাজ্যে বহুদিন ভিখেরির মতো ঘোরাঘুরি করেও কোনো কিছুর কূলকিনারা করতে পারছিলাম না। বিষয়টি আমার মনোমস্তিষ্কে দোলা দিচ্ছিল আল্লাহর রসুল (সা.)-এর একটি হাদিস শোনার পর। তিনি বলেন, মুমিনরা হলো মৌমাছির মতো। ব্যস এটুকুনই। যখন শুনলাম তখন চিন্তা করার ফুরসত হয়নি। কিন্তু গত প্রায় সাতটি বছর ধরে ভাবছি, রসুল (সা.) কেন তার মুমিন মোত্তাকি উম্মতদের মৌমাছির সঙ্গে তুলনা করলেন। যতবার মধু পান করেছি, যতবার মৌচাক বা মৌমাছি দেখেছি এবং জমিনের জানা-শোনা মুমিন মোত্তাকিদের দেখেছি ঠিক ততবারই হাদিসটির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য অনুধাবন করার চেষ্টা করেছি।
মৌমাছির সঙ্গে মুমিনের সম্পর্ক বলার আগে আল্লাহর রসুল (সা.) সম্পর্কে দুই-একটি কথা বলে নেই। তারপর বলব মৌমাছির বৃত্তান্ত এবং সবার শেষে মুমিনের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের বৃত্তান্ত। মানুষ হিসেবে আল্লাহর রসুল (সা.)-এর হাজারও শ্রেষ্ঠত্ব, সফলতা, স্বার্থকতা এবং গুণাবলির কথাগুলোর পাশাপাশি আমাদের একটি বিষয় দৃঢ়তার সঙ্গে হৃদয়ে ধারণ করতে হবে যে, তাঁর জ্ঞানগুলো ছিল পরিপূর্ণভাবে ঐশ্বরিক বা খোদা প্রদত্ত। মহাবিশ্বের মালিক আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত জ্ঞান ওয়াল জালাল তার সব শরিয়তি, মারেফতি, কুদরতি এবং হাকিকতের জ্ঞানভাণ্ডার মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে খুলে দিয়েছিলেন। আর এ কারণেই রসুল (সা.)-এর হাদিস নিয়ে দুনিয়ার পণ্ডিতরা কেয়ামত পর্যন্ত গবেষণা করেও কোনো কূলকিনারা করতে পারবে না। তাই আল্লাহর এই অধম বান্দা বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে বার বার শুধু অসহায়বোধ করেছে।
আল্লাহর লক্ষকোটি মাখলুকাতের মধ্যে মৌমাছি হলো ক্ষুদ্রতর অথচ তাৎপর্যপূর্ণ একটি পতঙ্গ গোষ্ঠী। সৃষ্টির আদি থেকেই মৌমাছিরা ছিল এবং মানুষজন তাদের দেখে আসছে। কিন্তু খুব অল্প সংখ্যক বান্দা-বান্দী এই সৃষ্টিটির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য সম্পর্কে ভেবেছে। আমাদের জ্ঞান এ সম্পর্কে কতটা মাহরুম তা কিছু তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করলেই বুঝতে পারবেন। প্রকৃতিতে মৌমাছির প্রজাতি রয়েছে ২০ হাজারেরও অধিক। এর মধ্যে মাত্র সাত-আটটি প্রজাতি মধু সংগ্রহ করে। মৌচাক শব্দটির সঙ্গে আমরা কম-বেশি সবাই পরিচিত। ঢাকা শহরে এবং ঢাকার অদূরে মৌচাক নামের সুবিশাল দুটি মার্কেট রয়েছে। তখন যদি প্রশ্ন করেন, মৌচাক শব্দটির অর্থ কী? তাহলে কতজন বলতে পারবেন যে মৌচাক হলো সেই স্থান যেখানে কাজ ও বিনোদনের জন্য একত্র হতে হয়। আরও প্রশ্ন আপনি করতে পারেন, যেমন মৌচাকে কতগুলো মৌমাছি থাকে, মৌমাছির ঘর কতগুলো, ঘরের আকার-আয়তনই কেমন, ঘরের বাসিন্দারা কী কী কাজ করে অথবা কেমনতর বিনোদন করে ইত্যাদি। আসুন এবার আমরা সংক্ষেপে মৌমাছি এবং মৌচাক সম্পর্কে কিছু জেনে মূল প্রসঙ্গে চলে যাই।
একটি দলে গড়ে ৬০ হাজার মৌমাছি থাকে। আর মৌচাকে থাকে গড়ে এক লাখ আশি হাজার ঘর বা কুঠরি। প্রতিটি কুঠরি ছয় বাহু এবং ছয়টি কোণবিশিষ্ট। প্রতিটি কুঠরির মধ্যে আবার তিনটি সাব কুঠরি রয়েছে, যা চার কোণবিশিষ্ট। সুতরাং একটি কুঠরির ভিতরে রয়েছে ৩x৪=১২টি কোণ এবং বাইরে রয়েছে ছয়টি অর্থাৎ মোট ১৮টি কোণ। আপনি অবাক হবেন এই ভেবে যে, মৌচাকের এক লাখ আশি হাজার কুঠরির প্রত্যেকটি যেমন আকার-আয়তনে সমান তেমনি কুঠরিগুলোর বাহু এবং কোণগুলোও পরস্পর সমান- এক সুতা এদিক-ওদিক হবে না।
মৌচাকের কুঠরিতে বসবাস করার জন্য একটি এলাকা রয়েছে- আর রয়েছে ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদনের এলাকা। বাকি কুঠরিগুলোতে সঞ্চয় করা হয় মধু। মৌচাকের প্রধানকে বলা হয় রানী। তার আকার-আকৃতি অন্যান্য মৌমাছি থেকে বড়। তিনি রোজ দুই হাজারের মতো ডিম পারে। সেই ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার জন্য প্রথমত দরকার পড়বে রাজকীয় সুধা বা রয়্যাল জেলি। এই জেলি কেবল রানীর কাছেই থাকে। রানীকে পাহারা দেওয়ার জন্য রয়েছে রাজকীয় সেনাবাহিনী, যা অনেকটা আমাদের দেশের এসএসএফ-এর মতো। এর বাইরে রয়েছে মৌচাক পাহারা দেওয়ার জন্য একদল সেনাবাহিনী। রয়েছে গুপ্তচর এবং পুলিশ বাহিনীও। এবার শুনুন মৌচাকে কে কীভাবে কাজ করে। একদল নারী মৌমাছি রয়েছে, যারা কেবল মৌচাকের চারপাশে উড়ে বেড়ায় এবং নাচ-গান করে সবাইকে আনন্দ দেয়। মৌচাকের ৯০% মৌমাছি হলো নারী। মাত্র এক থেকে দুই হাজার থাকে পুরুষ মৌমাছি। এরা কোনো কাজ করে না। সারাদিন কুঠরির মধ্যে থাকে। এরা নিজেরা খাবারটুকু পর্যন্ত খায় না। দায়িত্বপ্রাপ্ত নারীরা এসে তাদের খাইয়ে দিয়ে যায়। ইংরেজিতে পুরুষ মৌমাছিকে বলা হয় ড্রন, যার বাংলা অর্থ হলো- পরমুখাপেক্ষী, আলসে এবং নিষ্কর্মা।
গুপ্তচরেরা রানীকে জানায়, কোথায় মৌচাক করতে হবে। মৌচাকের আশপাশের দুই মাইলের মধ্যে প্রয়োজনীয় আঠা, মোম তৈরির উপকরণ এবং মধু সংগ্রহের সব উপাদান এবং পানীয় সরবরাহ থাকলেই রানী মৌচাক তৈরির হুকুম দেবেন। দলের বিশেষজ্ঞ কর্মীদের একদল বিভিন্ন গাছ থেকে আঠা সংগ্রহ করবে। আরেক দল মোমের উপকরণ সংগ্রহ এবং মোম তৈরি করবে। কারিগররা কুঠরি তৈরি করবে। ইঞ্জিনিয়াররা আঠা দিয়ে একেকটি কুঠরি অপরটির সঙ্গে জোড়া দেবে এবং গাছ বা অন্য কিছুর সঙ্গে মৌচাক স্থাপন করবে। ঝাড়ুদার বা পরিচ্ছন্ন কর্মীরা প্রত্যেকটি কুঠরি রানীর পছন্দমতো করে পরিষ্কার করবে। সব শেষে রানী মৌচাক পরিদর্শনে যাবেন। কোনো কুঠরির পরিচ্ছন্নতা যদি পছন্দ না হয় তবে রানী তা পুনরায় পরিষ্কার করতে বলবেন। কোনো কর্মী যদি অলস বা গাফেল হয়, তবে তাকে কঠোর শাস্তি- এমনকি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত প্রদান করা হয়।
মৌচাক উদ্বোধনের পর একদল মৌমাছিকে দায়িত্ব দেওয়া হয় মৌচাকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য। এদেরকে বলা হয় ফ্যানিং বি। এরা নিজেদের পাখা দিয়ে বাতাস করে মৌচাকের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা সর্বাবস্থায় ৩৪.৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বজায় রাখে। এই তাপমাত্রা না হলে ডিম থেকে যেমন বাচ্চা ফুটবে না তেমনি রয়েল জেলি এবং মধু নষ্ট হয়ে যাবে। যেসব দেশে তাপমাত্রা খুব বেশি সেসব দেশে কিছুু কুঠরিতে পানি জমা করে পাখা দিয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অন্যদিকে শীতের দেশে ফ্যানিং বি-রা নিজেদের শরীরের তাপ দিয়ে মৌচাকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। একদল মৌমাছিকে বলা হয় নার্স। তারা কেবল বাচ্চাদের পরিচর্যা করে। একদল আছে যাদেরকে বলা হয় বাবুর্চি। একদল মধু সংগ্রহ করে। অন্যদল আবার মধুর কুঠরিগুলোকে সিল করে দেয়, যাতে মধুগুলো উপচে বা চুইয়ে পড়তে না পারে। একদল কেবল পানি সংগ্রহ করে, আরেক দল মৃত মৌমাছিদের লাশ দাফন কাফনের ব্যবস্থা করে। মৌচাকে এতসব দল-উপদলের মধ্যে আরও রয়েছে স্কাউট বি বা বিপদে সাহায্যকারী দল, গার্ড বি বা নিরাপত্তা রক্ষী এবং পার্কিং বি অর্থাৎ মাল-সামান পার্কিংকারী মৌমাছি।
মৌচাকের প্রাণ ভ্রমরা হলেন রানী। আর রানীর সব শক্তির উৎস হলো রয়েল জেলি বা রাজকীয় সুধা- যা কিনা রানী পেয়ে থাকেন মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের কাছ থেকে। রানীর মুখ থেকে এই জেলি নিঃসরিত হয় এবং তিনি সেগুলো তার প্রাসাদ এলাকার সংরক্ষিত বিশেষ কুঠরিগুলোতে সংরক্ষণ করেন। তার অনুমতি নিয়ে নার্স মৌমাছিরা অতি সামান্য পরিমাণ রয়েল জেলি নিয়ে নবজাতকের কুঠরিতে রাখে। ফলে নবজাতকের শরীরে প্রাণসঞ্চার হয়। রানী বুড়ি হয়ে গেলে মৌমাছিরা সিদ্ধান্ত নেয় কাকে রানী বানানো হবে। সে মতে যে কোনো একটি নবজাতককে রয়্যাল জেলির চেম্বারে বা কুঠরিতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় আর সেই নবজাতিকা শতভাগ রাজকীয় সুধা পান করে হয়ে ওঠেন মৌরাজ্যের নতুন সম্রাজ্ঞী।
এবার আমরা আলোচ্য হাদিসটির ব্যাখ্যায় চলে যাই। মৌমাছির চরিত্র, আচরণ এবং কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে আমরা বুঝতে চেষ্টা করব কেন রসুল (সা.) মুমিনগণকে মৌমাছিদের সঙ্গে তুলনা করলেন। বোঝার সুবিধার্থে আমরা যদি ক্রমিক নম্বর ব্যবহার করি, তবে বিষয়টি আরও সহজবোধ্য হবে বলে আমার বিশ্বাস।
এক. মৌমাছিরা দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করে এবং সবসময় নেতার আদেশ-নির্দেশ মেনে চলে। তারা সীমা অতিক্রম করে না। তারা কখনো নিজেদের মধ্যে বিবাদ করে না এবং আক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত অন্যকে আক্রমণ করে না। তদ্রূপ রসুল (সা.)-এর মুমিন উম্মতরা জীবনের সর্বক্ষেত্রে নবীকে তাদের প্রকৃত নেতা মানে এবং তার জীবনাদর্শকে পুঁজি করে জীবিকা নির্বাহ করে। আল্লাহর দেওয়া বিধানের দ্বারা নিজেদের জীবন-জীবিকা-কর্ম এবং চিন্তার সীমা নির্ধারণ করে নেয় এবং নিজেরা কোনো দিন সেই সীমা অতিক্রম করে না। মুমিনরা আল্লাহ এবং তাঁর রসুল (সা.)-এর দিকে তাকিয়ে পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং নিজেদের মধ্যে বিবাদ করে না- তদ্রূপ আক্রান্ত না হলে কাউকে আক্রমণ করে না- এমনকি অপ্রয়োজনে একটি গাছের পাতাও ছিঁড়ে না।
দুই.
মৌমাছি বিনা কারণে এলোমেলোভাবে ওড়ে না। তারা বহুদূর থেকে ফুলের গন্ধ অনুভব করতে পারে। সেই গন্ধ অনুসরণ করে তারা প্রায় দুই মাইল পথ অতিক্রম করে কাঙ্ক্ষিত ফুলের ওপর গিয়ে বসে। ফুলের ওপর বসতে গিয়ে তারা প্রথমে বিবেচনা করে যে তারা যদি ফুলের ওপর বসে, তবে ফুলটির কোনো অসুবিধা হবে না। এরপর তারা লক্ষ্য করে ফুলের মধুর পরিমাণ ও অবস্থা। তারা শুধু ফুল থেকে ততটুকু মধুই গ্রহণ করবে যতটুকু গ্রহণ করলে ফুলের পরাগায়ন-গর্ভধারণ এবং ফল ফলাতে কোনো অসুবিধা হবে না। এর ব্যতিক্রম হলে মৌমাছিরা ফুলের চারদিকে শুধু ওড়ে কিন্তু বসে না- আবার বসলেও মধু সংগ্রহ না করে অন্য ফুলের কাছে চলে যায়।
রসুল (সা.)-এর মুমিন উম্মতরা এমনভাবে রিজিক অর্জন করে যাতে করে অন্য কোনো বান্দার ক্ষতি হয় না। তারা রিজিকের জন্য জমিনে ছড়িয়ে পড়ে এবং তাদের জন্য নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে যায়। তাদের ব্যবসা, বাণিজ্য, কর্ম- সব কিছুই পরিচালিত হয় আল্লাহর হুকুম, রসুল (সা.)-এর হাদিস এবং নিজেদের অন্তর্নিহিত সুবিবেচনার দ্বারা। যেসব স্থানে ইমান-একিন নষ্ট হওয়ার শঙ্কা থাকে সেসব বাজারে মুমিনরা গমন করেন না। মৌমাছিদের মতো তারাও তাদের গন্তব্য ঠিক না করে ঘর থেকে বের হন না।
তিন. মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করার পর তা নিজেদের সম্পদ মনে করে না। তারা রানীর হুকুমকে হৃদয়ে ধারণ করে মুখের মধ্যে মধু এমনভাবে সংরক্ষণ করে, যাতে এক বিন্দু মধুও তাদের পাকস্থলীতে না যায়। বরং যাত্রাপথের ক্লান্তি এবং নিজেদের ইন্দ্রিয়ের চাপে মুখ থেকে লালা নিঃসরিত হয়ে মধুর সঙ্গে মিশে যায়, যা কিনা মধুর গুণাগুণকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। মৌচাকে ফিরে মৌমাছিরা সেই লালাসমেত মধু মৌ কুঠরির পাহারাদারকে সাক্ষী রেখে কুঠরির মধ্যে সমর্পণ করে। পুরোটা সময় তারা একজন উত্তম আমানতকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। মুমিন উম্মতরা প্রথমত আমানতের খেয়ানত করে না। তাদের উপার্জিত রিজিককে তারা মনে করে আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত এবং আমানত, যা কিনা ব্যয় হবে পবিত্র উপায়ে কেবল পরিবার পরিজন আত্দীয়-স্বজন এবং আল্লাহর দীনের খেদমতে। নিজের খামখেয়ালি, বিলাস-ব্যসন কিংবা শয়তানী মত ও পথে কোনো মুমিন তার রিজিক ব্যয় করে না। এখানে রিজিক বলতে বুঝতে হবে- অর্থকড়ি, পদ-পদবি, ক্ষমতা, জৌলুস, প্রভাব প্রতিপত্তি, সন্তান-সন্ততি, শক্তি-সামর্থ্য এবং জ্ঞান-বুদ্ধি প্রজ্ঞাকে।
চার. মৌমাছিরা ফুলের কাছে গমন করে। মধুময় ফুলের কাছে উপস্থিত হয়ে আনন্দে আত্দহারা হয়ে তারা প্রথমে ফুলের সেবা করে। ফুলের পরাগায়ন ঘটায়। গান গেয়ে ফুলের ওপর নাচানাচি করে এবং নিজেদের পাখার ঝাপটায় ফুলের মধ্যে সঞ্চারিত প্রাণকে উজ্জীবিত করে তোলে এবং সবশেষে মধু আহরণ করে ফিরে যায় আপন আলয়ে। রসুল (সা.)-এর উম্মতরা সর্বদা তাদের রিজিকের উৎসের প্রতি কায়মনো বাক্যে কৃতজ্ঞ থাকে। রিজিকের উৎস যাতে বৃদ্ধি পায় তারা সর্বদা সেই চেষ্টা করে। তারা কোনোদিন নিজেদের রিজিক সংগ্রহ করতে গিয়ে রিজিকের উৎসমূল ধ্বংস করে না।
পাঁচ. মৌমাছিদের সব কর্ম আবর্তিত হয় মৌচাককে কেন্দ্র করে। তারা রাগ বা অভিমান করে মৌচাক ছিঁড়ে গাছের ডালে বা কোনো ফুল-পাতায় রাত কাটায় না। তারা একজন অন্যজনকে হিংসা করে না। কেউ কারও ওপর প্রাধান্য দেখায় না। অন্যের হক নষ্ট করে না। মৌচাকের অলস এবং দুর্বল লোকদের খোটা দেয় না এবং কারণে অকারণে ঝগড়া করে না। তারা রানীর আইন-হুকুম আহকাম মেনে চলে। তারা চলার পথে গুনগুন শব্দে জিকির করে এবং গন্তব্যে যাওয়ার পথে আশপাশে তাকিয়ে ফন্দি ফিকির করে না। তারা মাঝ পথে থেমে যায় না এবং মৌচাক ও নির্দিষ্ট ফুলের মাঝে অন্য কিছুতে আকৃষ্ট হয় না। তারা মৌচাকের বাইরে উন্মুক্ত প্রান্তরে কোনোদিন যৌন সঙ্গম করে না।
রসুল (সা.)-এর মুমিন উম্মতরা তাদের সব কর্ম পরিচালনা করে প্রথমত পরিবারকে কেন্দ্র করে। এরপর তারা তাদের মিল্লাত-সমাজ এবং রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। তারা বিনা প্রয়োজনে বাইরে রাত কাটায় না এবং অজায়গা বা কুজায়গায় গমন করে না। এক মুমিন অন্য মুমিনকে মহব্বত করে- পরস্পর বিবাদ করে না। তারা অসহায়কে সাহায্য করে, দুর্বলকে আশ্রয় দেয় এবং অভাবগ্রস্তকে দান করে।
আবার এসব দানের জন্য খোটা দেয় না। তারা বলে আমরা তো এসব করছি কেবল আল্লাহকে খুশি করার জন্য। তারা কাজ করে এবং অন্তরে আল্লাহভীতি ধারণ করে। তাদের জবান এবং চিত্ত আল্লাহর জিকিরে মত্ত থাকে। তারা জন্তু-জানোয়ারের মতো খোলামেলা জীবনযাপন করে না। তারা কিছু কর্ম দিনের জন্য নির্ধারিত করে রাখে এবং কিছু কর্ম নিশুতি রাতের জন্য।
লেখক : কলামিস্ট