৭ এপ্রিল, ২০২১ ২০:২৯

‘কার মুখে শুনি অমৃত বাণী’

এফ এম শাহীন

‘কার মুখে শুনি অমৃত বাণী’

এফ এম শাহীন

আমাদের দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষেরা আলেম সমাজকে ভীষণ রকম শ্রদ্ধা করে। তাদের মুখে ইসলামের কথা শুনে বুঝে কিংবা না বুঝে তা পালন করার চেষ্টা করে আসছে যুগ যুগ ধরে। শুধু প্রচারক হিসেবে নয়- সমাজের আলোকিত মানুষ হিসেবে পারিপারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় আচারেও তাদেরকে মূল্যায়ন করা হয়। 

কিন্তু বিগত কয়েক দশক ধরে এই আলেম সমাজের একটি উচ্চাভিলাষী অংশ সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের আবেগ ও সম্মান নিয়ে নানাভাবে বিভ্রান্ত করে আসছে। একাত্তরে এদেশের মানুষ দেখেছে, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল বদর, আল শামস, শান্তি ও কল্যাণ পরিষদের মওলানা ও আলেম নেতৃবৃন্দ কিভাবে দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করেছে। 

মানুষ দেখেছে, আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ-নির্যাতন করতে পাকিস্তানি বাহিনীকে তারা কিভাবে সহায়তা করেছিল, কিভাবে ইসলাম-এর নামে মানুষ খুন করেছে লুটপাট করেছে। আজ এদের বংশধর ও রাজনৈতিক পরম্পরা বাংলাদেশ বিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।  বাংলাদেশের স্বাধীনতায়, উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় এদের কোন ভূমিকা নাই।

মহান মুক্তিযুদ্ধে এদের নাকে খত দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে হলেও শেষ পর্যন্ত সকল দেশবিরোধী রাজাকারকে বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে এই পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা আবার পুনর্বাসিত হয় শহীদের রক্তে ভেজা বাংলায়। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির কেউ কেউ এইসব দেশবিরোধী পরিবারের সাথে ছেলেমেয়ে বিয়ে দেয়া, ব্যবসায় জড়ানো এবং রাজনৈতিক আপসের মাধ্যমে এই অন্ধকারের শক্তিকে লালন-পালন করেছে এবং এখনো করছে। 

দুঃখজনক হলেও সত্য বঙ্গবন্ধু-কন্যা বিগত ১২ বছর একটানা ক্ষমতায় থাকলেও এই সময়ে সবচেয়ে বেশি ধৃষ্টতা দেখিয়েছে এই স্বাধীনতা-বিরোধী জামায়াত-হেফাজত। আওয়ামী লীগের কিছু ভণ্ড, লোভী, আদর্শহীন ও জামায়াতের দালাল শ্রেণির নেতা ও এমপি-মন্ত্রীর প্রশ্রয়ে তারা আজ পুরো দেশটার উপর জঙ্গিবাদী সাম্প্রদায়িক থাবা বসিয়েছে। 

সম্প্রতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে ভাস্কর্য নিয়ে যে আস্ফালন হেফাজত দেখিয়েছে তা সত্যি লজ্জা ও ঘৃণার। উগ্র হেফাজত নেতা রাজাকার পুত্র মাওলানা মামুনুল হক ও বাবুনগরী যে সুরে রাষ্ট্র ও সংবিধানকে লঙ্ঘন করেছে তা দেশের যেকোনো দেশপ্রেমিক নাগরিকের জন্য অপমানের। প্রকাশ্যে রাষ্ট্রদ্রোহী বক্তব্য দিয়ে মামুনুল হক এই বাংলাদেশে বুক চিতিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে যখন রাষ্ট্র নায়ক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। 

এমন ঘটনার পরেও দেখি আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের সাথে বৈঠক করেন। ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলামের সেই তাণ্ডব কি তাহলে ভুলে গেছে রাষ্ট্র? কেনইবা সেই মামলাগুলো আর সচল হয় না। যদিও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সামাজিক সংগঠন সরব হলে অনেকে ঘুম ভেঙে হেফাজতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হয় । 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে পৃথিবীর বড় বড় রাষ্ট্রপ্রধান যখন বাংলাদেশের অর্জনে উচ্ছ্বসিত, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, ঠিক তখনই বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন নিয়ে এই স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-হেফাজত কী তাণ্ডবলীলা চালালো দেশজুড়ে। এই অপশক্তি যে স্বাধীনতাবিরোধী ও রাষ্ট্রবিরোধী আজ তা সকলের কাছে স্পষ্ট।

এই মামুনুলরা যে নিজের স্বার্থে ইসলামকে ব্যবহার করে, ফতোয়া দেয়, গরম গরম বক্তব্য দেয়, অথচ নিজের জীবন ইসলাম সম্মতভাবে পরিচালনা করেন না। তার প্রমাণ দুই দিন আগে নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁয়ের একটি রিসোর্টে এক নারীসহ হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের অবস্থান এবং পরবর্তীতে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা।

আমার বিশ্বাস, এ ধরনের নষ্ট ও ভণ্ড নেতৃত্বকে বর্জন করার জন্য মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্রদের কাছে আহ্বান জানাবে দেশের প্রকৃত ইসলামের শিক্ষায় দীক্ষিত আলেম সমাজ। হেফাজত নেতার নৈতিক অবনমনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা তথ্যনির্ভর এবং প্রকৃত সত্য উদঘাটন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদে দেওয়া বক্তব্যে ধর্ম ব্যবসায়ীদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে বলে দেশবাসী মনে করে।  

পরিশেষে বলতে চাই- ধর্মকে ব্যবহার করে যারা ভোগ-উপভোগ-সম্ভোগে ব্যস্ত, তাদের এখনই চিহ্নিত করে মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে এদের মিথ্যাচার থেকে মুক্তি দিতে হবে। পবিত্র ধর্মকে এদের হাতে জিম্মি করতে দেয়া যাবে না। এই সকল উগ্রবাদী নেতাদের কারণে আজ ইসলামের নামে সন্ত্রাসী তকমা লাগছে! এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী, যেন শান্তির ধর্ম ইসলামের নাম করে পবিত্র ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যা ও সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টিকারী উস্কানিমূলক বক্তব্য এই সকল ভণ্ডদের মুখে আর শুনতে না হয়।  

লেখক : সম্পাদক, ডেইলি জাগরণ ডট কম ও সাধারণ সম্পাদক, গৌরব ৭১।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

সর্বশেষ খবর