৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৯:২০

হিন্দু পরিবারের জমি দখলের চেষ্টা

দীপান্বিতা রায়

হিন্দু পরিবারের জমি দখলের চেষ্টা

কখনো ভাবিনি, সংখ্যালঘু নির্যাতনের শিকার হতে হবে আমার বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে! 

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার বেথুড়ি ইউনিয়নের রামদিয়া গ্রামে বসবাস করেন আমার বৃদ্ধ পিতা (৭৫) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নীরোদ বরন রায়, মাতা ইতি রানী রায় (৫৯) সিনিয়র সহকারী শিক্ষক রামদিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং আমার ফুপু দিপালী রায় (৭৩)। আমার বাবার কোনো পুত্রসন্তান নেই, আমরা দুই বোন ছাড়া এদেশে আমাদের কোনো আত্মীয়স্বজন নেই। আমার বৃদ্ধ তিন অসহায় আপনজন ওই গ্রামে প্রতিনিয়ত জীবননাশের হুমকি নিয়ে বসবাস করছে।

এলাকার খেয়ালউদ্দিন মোল্লার তিন ছেলে হারুন মোল্লা, হুমায়ুন মোল্লা ও সুলতান মোল্লা ২৫ বছর আগে আমাদের বাড়ির পাশের জমি কেনার প্রস্তাব করেন নামমাত্র মূল্যে। আমরা জমি বিক্রি করতে রাজি না থাকলেও তাদের ভয়ে বাধ্য হয়ে রাজি হই। কিন্তু তারা সেই জমির মূল্য পরিশোধ করে প্রায় ১৭/১৮ বছর ধরে। যে জমির মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে ১৮ বছরে অন্তত ১০ গুণ হয়েছে। কিন্তু তারা এত বছর ধরে পূর্বের ধার্যকৃত মূল্য পরিশোধ করে কয়েক শত কিস্তিতে। এমনকি কোনো কোনো কিস্তিতে তারা ৫০০ টাকা করে পরিশোধ করার নজিরও আছে। এই টাকা আদায় করতে গিয়ে আমার পিতা-মাতাকে অশ্রাব্য গালিগালাজ, ভয়ভীতি ও হুমকি সহ্য করতে হয়। শেষ পর্যন্ত তাদেরকে জমি রেজিস্ট্রি করে তাদের প্রাপ্য জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তারাও তাদের আমিন দ্বারা মেপে জমি বুঝে নেয়।

জমি বুঝিয়ে দেওয়ার ৮/১০ বছর পর হারুন মোল্লা বলতে থাকে, তার ভাগের ১৩ শতাংশ জমি বুঝে পায়নি, ২ শতাংশ কম আছে। অথচ, দুই পক্ষের আমিন ও গণ্যমান্য লোকজন দ্বারা জমি মেপে তাদের ৩ ভাইকে জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। হারুন মোল্লাকেও তার ভাগের ১৩ শতাংশ জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। 

গত ৬/৭ মাস ধরে হারুন মোল্লা আবারও জমি মাপের দাবি তোলে। এবং আমার পিতা-মাতাকে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন ও অপদস্ত করতে থাকে। পুনরায় জমি মাপার জন্য এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সবাইকে একসাথে হাজির করা খুবই কঠিন কাজ। অনেক চেষ্টার পর গত ৫ নভেম্বর ২০২২, এলাকার চেয়ারম্যান, গণ্যমান্য ব্যক্তি, দুই পক্ষের আমিন, দুই পক্ষের লোক, আওয়ামী লীগের নেতা, স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির অফিসার, প্রায় এক শতাধিক লোকের উপস্থিতিতে জমি মেপে দেখা যায়, হারুন মোল্লা তার প্রাপ্য ১৩ শতাংশ জমির চেয়েও ৩ শতাংশ বেশি অর্থাৎ ১৬ শতাংশ জমি ভোগদখল করছে।

হারুন মোল্লা ওই শতাধিক লোকের উপস্থিতিতে আমার বাবা-মায়ের কাছে ক্ষমা চায় এবং সেই ৩ শতাংশ জমি, যা সে অতিরিক্ত ভোগদখল করছে, সেই জমি আমার বাবার কাছ থেকে চেয়ে নেয়। 

উল্লেখ্য আমার বাবা নীরোদ বরন রায় এলাকার অত্যন্ত নিরীহ ভদ্রলোক হিসেবে পরিচিত। তিনি ১৯৯২ সালে গোপালগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি চেয়ারম্যানের অনুরোধে ভোগ দখলকৃত অতিরিক্ত ৩ শতাংশ জমি হারুন মোল্লাকে দান করে দেন।

এরপর কিছুদিন যেতে না যেতেই হারুন মোল্লা আমাদের মূল বাড়ি দখল করার চেষ্টা করে। সে আমার বাবা-মাকে হিন্দু, মালাউন, এদেশ তোদের নয়, ইন্ডিয়ায় যা, রাতের অন্ধকারে পালিয়ে না গেলে খুন করে ফেলব-এসব বলে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়। উল্লেখ্য, আমাদের বাড়িটার উপর ওদের তিন ভাইয়ের অনেক দিনের লোভ।

গত শনিবার ৩ ডিসেম্বর হারুন মোল্লা আমাদের মূল বসতভিটার সামনে পিলার পুতে বাড়ি দখল নেওয়ার চেষ্টা করে। আমার বৃদ্ধ বাবা স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে গেলে যথোপযুক্ত সাড়া পায়নি।

গত রবিবার ৪ ডিসেম্বর, রাতের অন্ধকারে হারুন মোল্লা আমাদের বাড়ির সামনের জমিতে বালু ফেলে এবং আমাদের বাড়ির অসংখ্য গাছ কেটে নিয়ে যায়। আমার বাবা-মা বাধা দিলে হারুন মোল্লা আমার বৃদ্ধ বাবা-মায়ের গায়ে হাত তোলে এবং খুনের হুমকি দেয়। এ অবস্থায় আমার ছোট বোন লাবনী রায় (সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার) গোপালগঞ্জের এসপি মহোদয়কে ফোন করে আমাদের বাড়ি দখলের বিষয়টি জানালে এসপি মহোদয় তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে গভীর রাতে বালু ভরাটের কার্যক্রম বন্ধ করেন। ৫ ডিসেম্বর সকালে ও ৬ ডিসেম্বর দুপুরে আবারও হারুন মোল্লা আমাদের জমিতে বালু ফেলে। এ কাজে বাধা দিলে তারা আবারও খুনের হুমকি দেয়। এ অবস্থায় আমার বাবা-মা ভীষণভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। 

আমাদের আবেদনের ভিত্তিতে বিজ্ঞ আদালত ৫ ডিসেম্বর তারিখে ১৪৪ ধারা অনুমোদন করেছে, যেন ওরা আমাদের বাড়ি দখল করতে না পারে। উল্লেখ্য, আমরা অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলাম যে, আমাদের বাড়ির উপর শকুনের দৃষ্টি পড়েছে। তাই আমার বৃদ্ধ পিতা আমার ভগ্নিপতি গৌতম কুমার মন্ডল এর নামে বাড়ি লিখে দেয়।

লেখক : স্বেচ্ছা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক, গোপালগঞ্জ সদর।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর